মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র। আমাদের উন্নয়নের গতি দ্রুত হলেও, এখনো অনেক বাধা রয়েছে এই অগ্রযাত্রায়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের সামনে সেই সেতুবন্ধন—যার মাধ্যমে আমরা জনগণের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি একদল প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেমন প্রতিনিধি চাই আমরা? কেমন হলে সেই প্রতিনিধি দেশ ও জাতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন?

সাংবাদিক হিসেবে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে, জীবনের নানা বাস্তবতা দেখে আমি উপলব্ধি করেছি—আমরা এমন এক সময় পার করছি, যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব। একজন জনপ্রতিনিধির প্রথম ও প্রধান গুণ হওয়া উচিত সততা। যিনি দায়িত্ব নেবেন, তিনি যদি ব্যক্তিগত লাভের চেয়ে দেশের কল্যাণকে বড় করে না দেখেন, তবে তার হাতেই দেশ নিরাপদ। জনগণের প্রতি যিনি দায়বদ্ধ, তিনিই বাস্তব সমস্যার সমাধানে আন্তরিক হবেন।

সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা একজন তরুণ যেমন নতুন চিন্তা আনতে পারেন, তেমনি অভিজ্ঞ একজন পেশাজীবী রাজনীতিবিদ জাতিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন—তবে শর্ত একটাই: যোগ্যতা থাকতে হবে। আইন প্রণয়ন, উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট বোঝা, সংসদে সঠিক প্রশ্ন তোলা—এসবের জন্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি।

দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে শুধু এখন নয়, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র দূরদর্শী নেতারাই পারেন আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই, সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হবেন। আইনের শাসন, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সাম্যের নীতিতে শ্রদ্ধাশীল হবেন। তিনি জানবেন, সংসদ মানে ক্ষমতার কেন্দ্র নয়, বরং সেবার জায়গা।

জনগণের প্রত্যাশা, জনপ্রতিনিধি হবেন ন্যায়ের প্রতীক। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। তিনি হবেন এক অনুকরণীয় মানুষ, যাঁর চরিত্রে কোনো দাগ নেই।

আমরা এমন নেতৃত্ব চাই, যাঁর হৃদয়ে থাকবে আল্লাহভীতি, ন্যায়পরায়ণতা এবং মানবপ্রেম। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ, চার খলিফার ইনসাফপূর্ণ শাসনব্যবস্থা—এই নীতি ও মনোভাব নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধির মধ্যে থাকতে হবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ, দেশ ও জাতির প্রতি অনুগত্য, এবং সর্বস্তরের মানুষের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি। তিনি হবেন সেই অভিভাবক, যিনি প্রতিটি অসহায় মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে ও সমাধান দিতে আগ্রহী থাকবেন।

নির্বাচনের সময় শুধু দেখা দিলেই চলবে না। আমাদের এমন জনপ্রতিনিধি দরকার, যিনি বরাবরই জনগণের পাশে থাকবেন। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হবেন, তাদের অভিভাবক হয়ে উঠবেন—ক্ষমতার নয়, ভালোবাসার ছায়া হয়ে।

নির্বাচন মানে কেবল ভোট দেওয়া নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যতের পথচলা ঠিক করার সুযোগ। আমরা যদি সচেতন হয়ে ভোট দিই, সঠিক প্রতিনিধি বেছে নিই, তবে বাংলাদেশ হবে স্বপ্নের সোনার বাংলা।
আমাদের দাবি একটাই—সৎ, যোগ্য, দায়িত্বশীল ও মানবিক প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ এগিয়ে যাক প্রগতির পথে।

লেখক
মোঃ শাহজাহান বাশার
সাংবাদিক ও কলামিস্ট