প্রভাষক মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আল ইমরান
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে বিবেকবান ব্যক্তিকে মর্যাদা দিয়েছে। বিবেকবানরা নেশা করেনা আল্লাহ তায়ালা ও প্রিয় নবীজির নির্দেশনা মানে। এ মদ জুয়া ইসলামে পরিপূর্ণ হারাম করা হয়েছে । কারণ, নেশা মানুষকে অন্যায় কাজে প্ররোচিত করে। নেশাগ্রস্থ মানুষের জন্য তার পরিবার ও সমাজ ধ্বংস হয়। নেশাগ্রস্হ মানুষের জীবনে নেমে আসে ঘোর ধ্বংস অন্ধকার। মদের নেশা, জুয়ার নেশায় মত্ত মানুষ সমাজকে ধ্বংস করে। তাই নেশা ও জুয়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
নেশার অনিষ্ট থেকে উম্মতকে বাঁচাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যায়ক্রমে মদ পানকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
নেশার জগতে পা বাড়ালে মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়।
মাদকাসক্তি মানুষকে জ্ঞানশূণ্য করে দেয়। তখন তার সামাজিক বন্ধন ও সম্মানের কোনো চিন্তাই তাদের থাকে না। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘(কখনো) তুমি মদ পান করো না। কারণ, তা সকল অকল্যাণ ও অঘটনের চাবিকাঠি।’ (ইবনে মাজাহ-৩৪৩৪)।
পবিত্র আল কোরআন ও হাদিসে মদ জুয়াকে সমানভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেন,
‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, এ দুটির মাঝে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২১৯)
এ আয়াতের বুঝা মদ ও জুয়ার উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ।
আমরা জানি ইসলামের দৃষ্টিতে মদ-জুয়া কবিরা গুনাহ। হারাম। শয়তান মানুষের কখনো ভাল চায় না। সে চায় মানুষ আল্লাহকে ভুলে থাকুক। সমাজে মন্দ আর ক্ষতিকর কাজের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ুক। জান্নাতিকে জাহান্নামি আর সমাজের শান্তিকে অশান্তিতে পরিণত করার জন্য শয়তান জাল বুনে মদ জুয়ার মাধ্যমে। যারা জুয়া খেলে আর মদ খায় তাদের জীবন ধ্বংস, পরিবার নিঃস্ব, অশান্তির দাবানলে ভবিষ্যত অন্ধকার।
আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘হে ইমানদারগণ! মদ, জুয়া প্রতিমা ও লটারি এ সবই শয়তানের কাজ। তোমরা তা থেকে বিরত থাক। আশা করা যায় , তোমরা সাফল্তা লাভ করতে পারবে। (সুরা মায়েদা, আয়াত-৯০)।
মদ ক্রয়-বিক্রয় করা, পান করা, বহন করা মদের ব্যবসার অনুমোদন সবই ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। নবীজির বদদোয়া করেছেন মাদকতায় জড়িতদের প্রতি। যারা এর অনুমোদন করে, সরবরাহ করে তাদের প্রতি।
জুয়াকে আরবিতে ‘মায়সির’ ও ‘কিমার’ বলা হয়। মায়সির ও কিমার এমন খেলাকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনোটাই স্পষ্ট নয়। জুয়া খেলার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রিয় নবীজির আগমনের সময় তৎকালীন মক্কায় নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। বর্তমানে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরও বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে; এগুলোর সবই হারাম। এখন অনলাইনে জুয়া খেলা আর ক্যাসিনোতো জুয়া খেলা অহরহ দেখতে পাচ্ছি। মোবাইলে মোবাইলে জুয়ার আসর। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতন না হলে সামনের দিনগুলো অনেক ভয়াবহ হবে।
আসুন আমারা মদ জুয়া,লটারি এসকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার প্রতি আহ্বান করবে, তার উচিত কিছু সদাকা করে দেওয়া।’ হাদিস শরীফে নবীজি শুধু জুয়াকেই হারাম করেননি, বরং জুয়ার ইচ্ছা প্রকাশকেও গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি অপরকে জুয়া খেলার জন্য ডাকবে তাকেও গুনাহের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কিছু সদাকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’ তাহলে জুয়া খেললে কী পরিণতি হতে পারে সে সম্পর্কে সকলের চিন্তা করা উচিত।
ইসলামে সব ধরনের জুয়া বাজিধরা অবৈধ। এর থেকে প্রাপ্ত ইনকাম হারাম। আর হারাম সম্পদ ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয় না।
কোন ব্যক্তি মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন কেউ নেশার দ্রব্য পান করে নেশাগ্রস্ত হয় অথবা যখন কেউ মদ পান করে তখন তোমরা তাকে বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৪৮২)।
তাই আসুন, আল্লাহ তায়ালা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলা আমাদের যুব সমাজকে মদ জুয়ার ভয়াল নেশা থেকে হেফাজত করুক আমিন । যুবক যুবতীসহ সকলকে এ সকল মন্দ কাজ পরিহার করার তাওফিক দান করুন। ইসলামের পথে কবুল করুন। আমিন।
লেখক, প্রভাষক মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আল ইমরান বাকশীমূল সুন্নীয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা, বুড়িচং কুমিল্লা । এবং সাধারণ সম্পাদক প্রাক্তন ছাত্র সংসদ ফকির বাজার ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা
এএনবি২৪ ডট নেট"একটি বহুল পঠিত অনলাইন বাংলা সংবাদপত্র,
প্রকাশক, মোহাম্মদ মাহামুদুল হাসান কালাম,
প্রগতি স্বরণী, ঢাকা-১২২৯
+৯৬০৭৩৩৯৬৯১
+৮৮০১৬৪৭০৫৩৪৪৯
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ
ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন। anbnewsbd@gmail.com
২০১২-২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত – এএনবিটোয়েন্টিফোর ডট নেট