ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এখন বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর মধুপুর ইউনিয়নের ঘটনা।

মধুপুর ইউনিয়নের বিএনপির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মুজাহিদুল, মমিনুল ও মিজানুর রহমান জানান, বদরগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর মধুপুর ইউনিয়নের কালজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোকসেদুল হক মাস্টার ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সময় তার দাপটে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ ছিল। ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের এমপি ডিউক চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরীর সব অন্যায় কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নিজেকে বাঁচাতে বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতা ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারের আশ্রয় নেন তিনি।

তারা আরও জানান, মোকসেদুল মাস্টার আওয়ামী লীগের সময় বিএনপির অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীর নাম বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে স্বার্থ হাসিল করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা যদি বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়, তাহলে জনগণ কখনো বিএনপিকে ক্ষমা করবে না।

উপজেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শামীম জানান, বিএনপির দুর্দিনে যারা ছিল তাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোকসেদুল মাস্টারকে কীভাবে বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি পদে দাঁড়ানোর অনুমতি দেয়া হয় এটা আমার বোধগম্য নয়। মূলত এটি বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে তিনি জানান।

বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কমল লোহানী জানান, বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতা নিজেকে উপজেলার সভাপতি বানাতে অর্থ খরচ করে বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির লোকজনকে ম্যানেজ করে বিএনপির ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন সভাপতি বানানোর চেষ্টা করছেন। কারণ তারা ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তার পদটি জেলা থেকে বাগিয়ে নেয়া সহজ হবে।

পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজিজুল হক জানান, বিএনপিতে লোকের কোনো অভাব নেই। অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছেন যারা এখনো বিভিন্ন মামলায় আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। মধুপুর ইউনিয়নে বিতর্কিত যে ব্যক্তি বিএনপির সভাপতি হওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছেন আমরা সে বিষয়ে জেলা কমিটিকে জানিয়েছি। তারাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেলা কমিটির সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী জানান, জাতীয় পার্টির কিছু দোসর বিএনপিতে যোগদান করে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করে দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য নানান ধরনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মধুপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা জাতীয় পার্টির দোসরদের বিএনপি’র নেতা বানাতে ভোটারদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট নিচ্ছেন। এর আগে দামোদরপুর ইউনিয়নেও ভোটারপ্রতি ৫ হাজার করে টাকা খরচ করে দোসরদের কমিটিতে বসিয়েছেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতা বর্তমানে বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী মোকসেদুল হক মাস্টার জানান, আমি কালজানি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি। স্কুল বাঁচাতে আমাকে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়েছে। এ কারণে তাদের আমি ফুল দিয়ে গেট সাজিয়ে অভ্যর্থনা দিয়েছি। নিজেকে বাঁচাতে আমি আওয়ামী লীগের সাথে মিশেছি।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জানান, নির্বাচন পরিচালনার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লাকুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বানিয়েছেন। তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।

তবে এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা ও বাছাই কমিটির সদস্য জেলা বিএনপি নেতা লিটন পারভেজসহ একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।