সিঙ্গাপুরের কাছে হার, শেষ মুহূর্তে আক্ষেপ—এএফসি বাছাইয়ে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, ১০ জুন ২০২৫

জাতীয় ফুটবলের জন্য যে দিনটি হতে পারতো এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী, তা রূপ নিলো তীব্র আক্ষেপে। তুমুল দর্শক সমর্থন আর উদ্দীপনার মাঝেও জয় নয়, শেষ পর্যন্ত হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশ জাতীয় দলকে। সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে নিজেদের অবস্থান আরও কঠিন করল স্বাগতিক বাংলাদেশ।

ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই দর্শকদের মাঝে ছিলো উত্তেজনার স্ফুলিঙ্গ। হামজা চৌধুরী, সামিত সোম, ফাহমিদুল ইসলামদের নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে হৃদয়বিদারক বাস্তবতায়।

ম্যাচের প্রথমার্ধেই স্বাগতিকদের জালে বল জড়ায় সিঙ্গাপুর। ৪৩ মিনিটে গোলরক্ষক মিতুল মারমার ভুলে গোল করে এগিয়ে যায় সিঙ্গাপুর। দ্বিতীয়ার্ধে সেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে ফেলে প্রতিপক্ষ। ইখসান ফান্দির দুর্দান্ত এক ফিনিশে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় তারা। এরপর রাকিব হোসেনের একমাত্র গোল স্বস্তি এনে দিলেও, ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি।

নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত সাত মিনিট যোগ হলে দর্শকদের প্রত্যাশা আবার মাথাচাড়া দেয়। একের পর এক আক্রমণে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ মুহূর্তে ফাহিমের ক্রস থেকে তারিক কাজীর হেডে কেঁপে ওঠে সিঙ্গাপুর গোলপোস্ট। কিন্তু গোলরক্ষকের অসাধারণ সেভে বঞ্চিত হয় স্বাগতিকরা। শেষ মুহূর্তের কর্নারেই ড্রয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়, যা পুরো ম্যাচের সারাংশ হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ দলের খেলায় ছিল কিছু মুহূর্ত যা আশাজাগানিয়া, আবার কিছু ভুল যা হতাশাজনক। সামিত সোমের ডিফেন্সচেরা পাস কাজে লাগাতে পারেননি রাকিব, আবার ফাহমিদুল সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। সবচেয়ে বড় হতাশা ছিল গোলরক্ষক মিতুলের ভুল সিদ্ধান্ত, যার ফলেই সিঙ্গাপুর প্রথম গোলটি করে।

দলের রক্ষণভাগের বিচ্ছিন্নতা, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কাজেম শাহর অফ-ফর্ম ও বদলি পরিবর্তনের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া মাঠে নামেননি, যা অনেক দর্শককেই অবাক করেছে।

হামজা চৌধুরীর ফ্রি কিক, থ্রু বল ও মাঠে উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও একজনের চেষ্টা দিয়ে পুরো দলের সাফল্য নিশ্চিত করা যায় না। সামিত সোম তার প্রতিভার ঝলক দেখালেও, ফিনিশিংয়ের অভাব পুরো দলকে ব্যর্থ করেছে।

এই ম্যাচ প্রমাণ করে দিয়েছে, বাংলাদেশ এখনো বড় মঞ্চে নিয়মিত সফল হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের নিয়ে আশাবাদ থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয় এবং বাস্তবতায় টিকে থাকার মানসিকতা গড়তে সময় লাগবে।

এই হারের পর এএফসি বাছাইয়ে নিজেদের গ্রুপে তিন নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। হংকংয়ের কাছে ১-০ গোলে হারা ভারত এখন তলানিতে। গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর।

ফলে বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচগুলো এখন হয়ে উঠেছে অলিখিত ‘ফাইনাল’। বাকি ম্যাচগুলোতে জয় না পেলে এই বাছাইপর্বে আর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে যাবে।

একটি ম্যাচ বদলে দিতে পারতো দেশের ফুটবল ভাগ্য। কিন্তু সেই সুযোগ আর বাস্তবায়িত হলো না। তবুও হামজা-সামিত-রাকিবদের লড়াই ও স্পিরিট আশার আলো দেখায়। এখন দরকার দলগত একতা, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন। না হলে ফুটবলের এই নবযাত্রা আবার থেমে যাবে অতীতের মতোই হতাশার ধুলিকণায়।