
মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার,
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া-নোয়াপাড়া গ্রামে বিএনপি নেতা ওয়াদুদ রনি ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন, জমি দখল, দোকান লুটপাট এবং প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় আজ (২ জুন) কুমিল্লা জেলা আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী শারমিন আক্তার ও শিরিন আক্তার রক্তাক্ত অবস্থায় থানায় গেলেও পুলিশের গড়িমসির কারণে আদালতের দ্বারস্থ হন। মামলার কপি আমাদের প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।এছাড়াও হামলার সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ভুক্তভোগীদের একাধিক স্থিরচিত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার সংস্থার মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
আজ দুপুরে কুমিল্লা জেলা আদালতে দায়ের করা মামলায় বিবাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—ওয়াদুদ রনি, পেশায় স্থানীয় বিএনপি নেতা,মামুন মেম্বার, স্থানীয় ইউপি সদস্য,এবং তাদের সহযোগী সমুন মিয়া, হোসেন মিয়া, জামাল, ফরিদ সহ আরও কয়েকজন
বাদী পক্ষের আইনজীবী জানান,“এটি শুধু নির্যাতন নয়, এটি পরিকল্পিত সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার। ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি অনুযায়ী আদালত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশাবাদী।”
সালদানদী রেল স্টেশন বাজারে শারমিন ও শিরিন আক্তার গত ১০ মাস আগে একটি দোকান কেনেন। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে বিএনপি নেতা রনি ও তার লোকজন তাদের দোকান থেকে জোরপূর্বক বের করে দিতে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। ঘটনার দিন হামলাকারীরা মা-মেয়েকে কিল-ঘুষি, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। দোকানপাট তছনছ করে নগদ টাকা ও মালামাল লুটে নেয়। স্থানীয়রা আতঙ্কে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
শারমিন বলেন,“রক্তে ভেসে যাচ্ছিলাম, কিন্তু থানায় গেলে বলে আগে হাসপাতালে যাও। পরে আবার হামলা হলে বলে মাদকের মামলা দিয়ে চালান দিব।”একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপি নেতা রনির অনুসারীরা নারীদের গায়ে হাত দিচ্ছে, গালিগালাজ করছে, দোকান ভাঙচুর করছে। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়, শারমিন ও শিরিন আক্তারের মুখমণ্ডল ও হাত-পায়ে আঘাতের চিহ্ন ও রক্তের দাগ। এইসব দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ জনগণ বিস্মিত হয় এবং মন্তব্য করে:“এখনই যদি এমন বর্বরতা চলে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী হবে?”এত বড় ঘটনার পরেও থানা পুলিশ নীরব কেন—এই প্রশ্ন এখন জনমনে। ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি আবুল হাসান বলেন,“আমার কাছে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। আপনার কাছ থেকেই শুনছি।”
তবে আদালতে দাখিলকৃত মামলার কপিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ অজুহাত দেখিয়ে অভিযোগ নেয়নি। এমনকি সিভিল পোশাকে গিয়ে এসআই জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থল দেখে ফিরে আসেন, কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ব্রাহ্মণপাড়ার শিক্ষিত সমাজ, মানবাধিকার কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন,
“যেখানে নারীর নিরাপত্তা নেই, সাধারণ মানুষের দোকানপাট লুটে নেয়া হয়, জমি দখল হয়, আর পুলিশ চুপ করে থাকে—সেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা কোথায়?”
মামলার ভিত্তিতে ওয়াদুদ রনি ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার,ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত,সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির তদন্ত ও শাস্তি,জমি দখল ও লুটপাটে ব্যবহৃত ভুয়া দলিল তদন্তে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ,রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন