মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ পুলিশ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম (৩০)-এর। গতকাল শনিবার (৩১ মে) দুপুরে ৩৯ যাত্রী নিয়ে ভাসানচর থেকে করিমবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া একটি যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবচরে পৌঁছালে আকস্মিকভাবে ট্রলারটির তলা ফেটে যায় এবং মুহূর্তেই সেটি উল্টে যায়। এ দুর্ঘটনার পর থেকে ব্যাপক উদ্ধার অভিযান শুরু হলেও সাইফুল ইসলামের সন্ধান মেলেনি। তার খোঁজে কাজ করে যাচ্ছেন কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
নিখোঁজ পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার চরশাহী গ্রামের গোপাল বাড়ির বাসিন্দা। তার বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম ও মা রহিমা বেগম। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র ছেলে এবং বর্তমানে নোয়াখালী জেলা পুলিশের পুলিশ লাইন্সে কর্মরত। চাকরির প্রয়োজনে গত তিন বছর ধরে তিনি জেলার বিভিন্ন থানায় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ৩টার দিকে ট্রলারটি ভাসানচর থেকে করিমবাজার ঘাটে যাওয়ার পথে নদীর ডুবচরে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই ট্রলারটিতে পানি ঢুকতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেটি উল্টে যায়। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে চিৎকার ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে যাত্রীরা ছিটকে পড়ে যায়। উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, করিমবাজার ঘাট থেকে তিনটি ট্রলার দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পড়ে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন নামে একজন যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং হাসিনা খাতুন নামে একজন রোহিঙ্গা নারী যাত্রীর মরদেহ নদীর তীরে ভেসে ওঠে।
উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ও বৃষ্টিপাতের কারণে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের দুটি ইউনিট এখনো সাইফুল ইসলামের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা ধারণা করছেন, সাইফুল ইসলাম ডুবে গিয়ে নদীর গভীরে তলিয়ে যেতে পারেন কিংবা প্রবল স্রোতের টানে অনেক দূরে ভেসে গেছেন।
নিখোঁজ সাইফুল ইসলামের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একমাত্র ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে তার বাবা-মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব তাদের ছেলেকে খুঁজে বের করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
সাইফুলের সহকর্মীরাও চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। নোয়াখালী জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “সাইফুল অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং সৎ একজন সদস্য ছিলেন। তার খোঁজ না পাওয়া আমাদের জন্য গভীর বেদনার।”
নোয়াখালী জেলা প্রশাসন এবং হাতিয়া উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই একটি প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে সহায়তা এবং নিখোঁজদের খোঁজে টানা অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে।
মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আমাদের জন্য শুধু একটি দুঃখজনক সংবাদই নয়, বরং একটি জাতীয় শোক ও উদ্বেগের বিষয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উদ্ধারকারী দলের কাছ থেকে সক্রিয় তৎপরতা অব্যাহত রেখে দ্রুত নিখোঁজ সাইফুল ইসলামকে উদ্ধার ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা রাখছে জাতি।
এএনবি২৪ ডট নেট"একটি বহুল পঠিত অনলাইন বাংলা পোটাল, এটা কোন প্রিন্ট দৈনিক পত্রিকা নয়।
প্রকাশক, মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান কালাম,
প্রগতি স্বরণী, ঢাকা-১২২৯
+৯৬০৭৩৩৯৬৯১
+৮৮০১৬৪৭০৫৩৪৪৯
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন। anbnewsbd@gmail.com
২০১২-২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত – এএনবিটোয়েন্টিফোর ডট নেট/এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।