
মোঃ শাহজাহান বাশার: স্টাফ রিপোর্টার,
বর্তমান সমাজে একটি অদ্ভুত মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। যেখানে চিন্তা, যুক্তি, মূল্যবোধ কিংবা সমাজ গঠনের মতো মৌলিক বিষয়ের চেয়ে বরং সস্তা, হাস্যকর ও অর্থহীন বিনোদনই হয়ে উঠেছে অধিক আকর্ষণীয়। এই পরিবর্তনের গভীরতা বিশ্লেষণ করলে এক ভয়াবহ বাস্তবতা আমাদের সামনে উঠে আসে—আমরা এখন এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে ব্যর্থতা, হতাশা ও অনিশ্চয়তা থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য মানুষ সস্তা বিনোদনের আশ্রয়ে আশ্রিত হচ্ছে।
এই প্রবণতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে নিতান্ত তুচ্ছ, অশ্লীল বা হাস্যকর কনটেন্ট দিয়েই রাতারাতি অগণিত অনুসারী পাচ্ছে। তারা হয়ে উঠছে ‘সেলিব্রিটি’, অথচ তাদের মাঝে সমাজের জন্য বাস্তব অবদান, জ্ঞান বা চিন্তার কোনো প্রতিফলন নেই। জনপ্রিয়তার নামে তারা মানুষের মনোরঞ্জনের দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তারা হয়ে উঠছে মূল্যবোধহীনতার প্রতীক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও, যেখানে নাচ, অঙ্গভঙ্গি, কুরুচিপূর্ণ হাস্যরস বা অশ্লীল বাক্যচর্চা রয়েছে, তা লাখ লাখ মানুষ দেখছে, শেয়ার করছে, উৎসাহ দিচ্ছে। অথচ একই প্ল্যাটফর্মে একজন শিক্ষক, গবেষক কিংবা সমাজ সংস্কারকের কথা হলে তেমন কোনো আগ্রহই দেখা যায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মূলত একটি ব্যর্থ সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন, যেখানে মানুষ আর বাস্তব উন্নয়ন কিংবা পরিবর্তনের আশা রাখে না। হতাশা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিরাপত্তাহীনতার মাঝে মানুষ বাঁচতে চায় কল্পনার এক ফাঁকা জগতে। এই ফাঁকা জগতে প্রবেশের সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো ‘সস্তা বিনোদন’।
এই প্রবণতার ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি গভীর সংকটে পড়বে—যেখানে তারা জনপ্রিয়তার সংজ্ঞা ভুলভাবে শিখবে, সমাজের আসল নায়কদের চিনবে না, বরং হাস্যকর ও অদক্ষ মানুষদের আদর্শ মানতে শুরু করবে।
এখন সময় এসেছে ভাবার—আমরা কোন সমাজ চাই? চিন্তাশীল, গঠনমূলক ও মূল্যবোধসম্পন্ন এক প্রজন্ম, নাকি কেবল হাসির ঠেলায় ভেসে যাওয়া এক অর্থহীন জনগোষ্ঠী?
জনমত গঠনের জন্য শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ও সচেতন সমাজকেই সামনে এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো একদিন এই সস্তা বিনোদনই আমাদের ভবিষ্যৎকে চিরতরে গিলে ফেলবে।