
মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার
সারাদেশে সরকারি দফতরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত অফিসগুলোর অন্যতম হিসেবে পরিচিত সাব রেজিস্ট্রার অফিসগুলো। ভূমি ও দলিল সংক্রান্ত নানা কাজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ প্রায়শই হয়রানি ও ঘুষের শিকার হন। এবার কুমিল্লার আদর্শ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ লেনদেনের দৃশ্যমান প্রমাণ মিলেছে, যা নতুন করে জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) সকাল ১১টার দিকে সাংবাদিক যখন সরেজমিনে কুমিল্লা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে উপস্থিত হন, তখন দেখা যায়—একজন কর্মকর্তা প্রকাশ্যেই এক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নগদ অর্থ গ্রহণ করছেন। সেই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাংবাদিকের কাজে বাধা প্রদান করেন। এতে ঘুষ লেনদেন গোপন রাখার ইঙ্গিতই উঠে আসে।
ভিডিওতে দেখা যায়, অফিসের মোহরার শাহ আলম, যিনি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলি ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম নামের এক গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ টাকা গ্রহণ করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে করিম বলেন, “সম্মানি বাবদ দিয়েছি।” কিন্তু শাহ আলম এ অর্থকে “ফাইলের নির্ধারিত ফি” বলে দাবি করেন।
রশিদ চাওয়া হলে তিনি কোনো সরকারি রশিদ না দেখিয়ে একটি সাদা কাগজে হাতে লেখা তথ্য তুলে ধরেন, যা তিনি ফি’র প্রমাণ বলে উল্লেখ করেন। অথচ সরকারি আদায় সংক্রান্ত কোনো ফি কখনো হাতলেখা কাগজে হয় না—এটি সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব রেজিস্ট্রার দীপঙ্কর দাস বলেন, “আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে তিনি নিজেও কোনো নির্দিষ্ট রশিদ বা বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি।
পরে শাহ আলম করিমকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, যে অর্থ তিনি নিয়েছেন তা সরকারি ফি হিসেবেই ধরা হয়েছে। আব্দুল করিম বলেন, “আমার তিনটা ফাইল আছে। দুইটা নিয়েছি, একটা পরে নিব। তিনটার জন্য ২০০ টাকা দিয়েছি।” অথচ প্রতিটি ফাইলের নির্ধারিত ফি ৬০ টাকা হলেও মোট ফি হওয়ার কথা ১৮০ টাকা। ফলে ২০ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ।
ঘটনার ব্যাপারে কুমিল্লা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ সোহাগ পারভেজ বলেন, “সরকারি ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় অন্যায় ও অনভিপ্রেত। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি অফিসের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়।”
এ বিষয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিনা জাহান বলেন, “ঘটনাটি যেহেতু সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ঘটেছে, বিষয়টি তাকে জানানো হলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”
স্থানীয় জনগণের মধ্যে এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, দিনের পর দিন এমনভাবে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না। “সেবা নিতে গেলে আগে টাকা না দিলে ফাইল নড়েই না,” এমন অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নীতিগতভাবে মারাত্মক লঙ্ঘন। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচিত এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।