২ জুন আলোচনায় যমুনায় বিএনপিকে আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের, 

মো. শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার: 

ঢাকা, ৩১ মে:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে আন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২ জুন বিএনপিকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ

আজ শনিবার (৩১ মে) দুপুরে ঢাকায় কৃষকদলের একটি আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে তিনি এ কথা জানান। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা অভিযোগ করেন, যারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না, তারা বিএনপি নেতাদের ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘বিদেশি এজেন্ট‘ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তিনি বলেন, “১৭ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। এই দীর্ঘ ত্যাগের প্রতিদান এক শ্রেণির মহল আমাদের অপবাদ দিয়ে দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “২ জুনের আলোচনার আমন্ত্রণ নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক আনুষ্ঠানিকতা। তবে এখন পর্যন্ত বাস্তব কার্যক্রম বা সমঝোতার কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে কি না—সেই প্রশ্নও এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “ফ্যাসিবাদের কুটচাল এখন জাতির অভ্যন্তরে একটি গভীর বিভক্তি তৈরি করেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী জাতিকে দুভাগে ভাগ করে নিজেদের সুবিধা নিতে চাইছে। এটি ভয়াবহ এবং দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”

আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, “ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন দিতে হবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। অথচ সরকার কিংবা তাদের শুভানুধ্যায়ী মহল নির্বাচনের সময় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। যদি ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার জন্য কোনো যৌক্তিকতা থাকে, তবে সরকারকে সেই যুক্তি স্পষ্ট করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “সংস্কারের নামে কলা ঝুলানো হচ্ছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। একদিকে বলছে ‘আলোচনায় বসুন’, আরেকদিকে বিরোধী দলকে দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ দ্বিচারিতা চলতে পারে না।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জোরালো করেছে বিএনপি। এই প্রেক্ষিতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির সাথে আলোচনার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই আলোচনার আয়োজনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

তবে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, আলোচনা যদি গঠনমূলক না হয় এবং কার্যকর সমাধান না আসে, তবে তা আবারও প্রহসনের জন্ম দেবে। এ বিষয়ে সচেতনভাবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি আন্দোলনও চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

বর্তমান পরিস্থিতি নির্দেশ করে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট গভীর। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে মতবিরোধ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায় ২ জুনের বৈঠক রাজনৈতিক সংকট নিরসনে মোড় ঘোরাতে পারে কি না, সেদিকেই তাকিয়ে দেশবাসী।