
মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, ২৯ মে ২০২৫
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “বাংলাদেশ সংবিধান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে।” জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে বাংলাদেশের ধারাবাহিক ও সাহসিক ভূমিকা তুলে ধরে সেনাপ্রধান বলেন, “১৯৮৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের নানা প্রান্তে জাতিসংঘের মিশনে অংশগ্রহণ করে সাহস, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই গৌরবের অংশ হতে পারা প্রতিটি শান্তিরক্ষীর জন্য এক সম্মানের বিষয়।”
বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয়। তারপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে যেমন কঙ্গো, সুদান, দক্ষিণ সুদান, হাইতি, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকসহ একাধিক দেশে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা একাধিক শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।
সেনাপ্রধান বলেন, “শান্তিরক্ষা কেবল একটি দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের জাতীয় আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় অংশীদার।”
শান্তিরক্ষা মিশনে নারী শান্তিরক্ষীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান জানান, “নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ গর্বিত। তারা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ভবিষ্যতে এই অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে আমরা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে, যাতে শান্তিরক্ষীরা সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে কাজ করতে পারেন।”
জাতিসংঘ মহাসচিবসহ আন্তর্জাতিক মিশন কমান্ডাররাও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব ও মানবিক আচরণের ভূয়সী প্রশংসা করে থাকেন। সেনাপ্রধান এ বিষয়ে বলেন, “বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন না, তারা স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন করেন এবং মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এটি আমাদের শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম সাফল্য।”
সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শহীদ সকল শান্তিরক্ষীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, “তাদের আত্মত্যাগ জাতির গর্ব। আমরা তাদের স্মরণ করি এবং শান্তির জন্য তাদের এই চরম ত্যাগকে সম্মান জানাই।”জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী এখন আধুনিক ও দক্ষ। আমরা প্রতিটি আন্তর্জাতিক মিশনে আমাদের দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অব্যাহত অংশগ্রহণ বিশ্বদরবারে দেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত করেছে। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য একদিকে যেমন এই ভূমিকার প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি জোরদার করে, অন্যদিকে এটি ভবিষ্যতের জন্য নতুন পথনির্দেশনা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।