
মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লা, ২৯ মে ২০২৫
কুমিল্লায় ঔষধ ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন—দুই ব্যক্তির হুমকি, প্রতারণা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ফলে তারা এখন কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এবং নিজেদের জীবন ও ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরাসরি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কুমিল্লার ঔষধ ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা শহরতলীর আলেখারচর ঔষধ মার্কেট কমপ্লেক্সে কুমিল্লা ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতি কুমিল্লা জেলা শাখার নবনির্বাচিত সভাপতির বিরুদ্ধে চিহ্নিত পাসপোর্ট দালাল আবু বকর সিদ্দিকী শিল্পী এবং ভেজাল ওষুধ বিক্রির দালাল সাইদুল হক রুবেল মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছেন। তারা সমিতির বৈধ কমিটির কার্যক্রম ব্যাহত করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এ সময় বক্তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, “এই দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে পেছন থেকে ওষুধ মার্কেটে দালালি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। তারা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে ঔষধ ব্যবসায়ীদের ভয় দেখায় এবং নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করার চেষ্টা করে।”
সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, গত ২২ মে বাংলাদেশ কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতির নিয়মিত অধিবেশনের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলা শাখার বৈধ কমিটি অনুমোদিত হয়। কিন্তু এই কমিটি গঠনের পরপরই দালালচক্রের বিরাগভাজন হয় নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “কমিটি গঠনের পর থেকেই আবু বকর ও রুবেল বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে, ফোনে প্রাণনাশের ভয় দেখানো হচ্ছে, দোকানে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং এমনকি কিছু অজানা লোকজন দোকানের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছে। এটা কোনোভাবেই ব্যবসায়ী সমাজের জন্য নিরাপদ পরিস্থিতি নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুমিল্লা ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী নোমান। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সদস্য নিখিল চন্দ্র দত্ত, প্রহ্লাদ চন্দ্র দত্ত, নাঈম শারিয়ার বাপ্পি, শ্রীকান্ত চন্দ্র দত্ত, মোজাম্মেল হক, সাজেদুল ইসলাম, মনির হোসেনসহ একাধিক ব্যবসায়ী নেতা।
তারা বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই, এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। তাদের প্রতারণা, হুমকি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ না হলে কুমিল্লার ওষুধ ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যের জন্যও বড় ঝুঁকি তৈরি হবে।”
ব্যবসায়ী নেতারা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে চাই, কিন্তু কিছু দালাল ও চক্র আমাদের ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।”
কুমিল্লার ওষুধ ব্যবসায়ীদের জীবন ও ব্যবসা আজ চরম হুমকির মুখে। ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, প্রশাসনের প্রতি করেছেন মানবিক ও শক্তিশালী আহ্বান। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।