নিজেকে বদলান, সমাজ বদলাবে — ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান

মোঃ শাহজাহান বাশার
আমরা যে সমাজে বাস করি, সে সমাজ আমাদের মূল্যবোধ, বিবেক ও নৈতিকতার আয়না। সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে আগে আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে। এই বদল কেবল রাজনৈতিক দলের নাম পরিবর্তনে নয়, বরং মানসিকতা, নৈতিক অবস্থান এবং সাহসিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে হওয়া প্রয়োজন।

আপনি যে দলই করুন না কেন, আপনি আগে একজন মানুষ।
একজন প্রতিবেশী, একজন নাগরিক, একজন সন্তানের অভিভাবক। দলীয় পরিচয়, মতাদর্শ বা চিন্তা-চেতনার পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু সেই পার্থক্য যেন কখনো মানবিকতা, সহমর্মিতা বা সামাজিক দায়িত্ববোধকে ছিন্নভিন্ন না করে। রাজনীতি আসুক না আসুক, প্রতিবেশীর দরজায় যেন আমরা একজন মানুষ হিসেবে পৌঁছাই।

আজ আমাদের দেশে এক অদ্ভুত সামাজিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে—ন্যায়কে ন্যায় বলা কঠিন হয়ে পড়েছে, অন্যায়কে অন্যায় বলা যেন অপরাধ। দলীয় স্বার্থ, ব্যক্তি কেন্দ্রিক সুবিধা, কিংবা ক্ষমতার বলয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখার প্রবণতা আমাদের বিবেককে গলা টিপে ধরেছে। আমরা হয়তো অনেক সময় সব বুঝেও চুপ থাকি, কিংবা কৌশলে চোখ ফিরিয়ে নেই। কিন্তু এই নীরবতা শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ক্ষতি করছে—সমাজে, রাজনীতিতে, পারিবারিক বন্ধনে।

এমন সময় এসেছে, যখন মানুষকে বলতে হবে: ন্যায়ের পক্ষে থাকুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলুন।
অন্যায়ের প্রশ্রয় মানে নিজের চারপাশে অন্ধকার তৈরি করা। একটি সমাজে যদি এক একজন ব্যক্তি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়, তাহলে সেই সমাজে আলোর দীপ্তি নিভে যায়, ঘনিয়ে আসে অনিশ্চয়তা আর অশান্তি।

আমরা যারা গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত, তারা সমাজের আয়না।
এই আয়না যেন বিকৃত না হয়, এই আয়না যেন সত্যকে সত্য বলার সাহস হারিয়ে না ফেলে—এটা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। তবে শুধু গণমাধ্যম নয়, প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে তার অবস্থান থেকে সত্যকে তুলে ধরা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া।

আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনার আচার-আচরণ, আপনার শব্দচয়ন—সবই জাতির চোখে আপনাকে একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, আবার এগুলোই আপনাকে বিতর্কিত করে তুলতেও পারে।
তাই হিংসা, দলাদলি, হানাহানি, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নয়—গঠনমূলক চিন্তা, ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান, সমাজের জন্য ভালো কিছু করার মানসিকতা তৈরি হোক আমাদের চরিত্রে।