গেজেট জারির ৩০ দিনেও শপথ নয়, ইশরাককে ঠেকাতে সরকার ‘আইনি জটিলতা’র নাটক সাজাচ্ছে?

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে গেজেট আকারে ঘোষণা করা হলেও আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) সেই গেজেট প্রকাশের ৩০তম দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তিনি শপথ নিতে পারেননি। আইন অনুযায়ী এই ৩০ দিনের মধ্যে শপথগ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ‘আইনি জটিলতা’র অজুহাতে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান থেকে পিছিয়ে এসেছে।

সরকারের ‘নিরবতা’ ও ‘দুরভিসন্ধি’?

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এমন অবস্থানকে বিএনপি ও ইশরাক সমর্থকরা দেখছেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার ষড়যন্ত্র হিসেবে। সরকারের নিস্ক্রিয়তা একদিকে যেমন আইনের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে, অন্যদিকে তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে বলেও মনে করেন তারা।

আইনি লড়াই ও শপথের অনিশ্চয়তা

ইশরাকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, ইতিমধ্যেই গেজেট প্রকাশের ৩০ দিন পার হয়ে গেছে। এটি সরকারের তরফ থেকে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। “নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ইচ্ছাকৃতভাবে শপথ না নিলে তা ল্যাপস হয়, কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি না পড়ায় তাহলে নয়,” বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “ইশরাক হোসেন শপথ নিতে আগ্রহী ছিলেন এবং আছেন। দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। কিন্তু সরকার তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখছে।”

গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এক রিট খারিজ করে দিলে সরকার দাবি করে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। এরপরই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়, যার শুনানি আজ চেম্বার আদালতে হওয়ার কথা রয়েছে।

নগর ভবনে অচলাবস্থা ও আন্দোলনের হুমকি

ইশরাকের সমর্থনে গত ১৩ দিন ধরে নগর ভবনে চলছে কর্মবিরতি ও তালা বন্ধ আন্দোলন। করপোরেশনের একটি বড় অংশের শ্রমিক ইউনিয়নও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ‘ঢাকাবাসী’ নামক একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা গতকাল ফের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন।

সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, “যদি ইশরাককে মেয়রের শপথ পড়ানো না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে।” এদিকে, এই অচলাবস্থায় নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে এবং সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সরকার কি আদালতের আড়ালে সময়ক্ষেপণ করছে?

সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী আদালতে লিভ টু আপিল বিচারাধীন থাকায় শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, গেজেট জারির সময় আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন হয়নি, তাহলে এখন কেন দরকার? এটা কি ইশরাককে সময় মতো শপথ করতে না দেওয়ার কৌশল নয়?

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, “আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি। সচিবালয়ে আগুন লাগায় আমরা নগর ভবনে কাজ করছিলাম, শিগগির সচিবালয়ে ফিরে যাব।” অথচ এ সময়ই নগর ভবন তালাবদ্ধ, নাগরিক সেবা বন্ধ এবং মানুষ বিপাকে।

জনগণের প্রশ্ন: নির্বাচিত হলে শপথ নিতে না পারার মানে কী?

বিএনপি ও সাধারণ নাগরিকদের একাংশ বলছে, “যদি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও শপথ নিতে না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচনের মানে কী? গণতন্ত্র কী শুধু কাগজে-কলমে?” এই পরিস্থিতিতে দেশের বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার বড় প্রশ্ন তুলছে নাগরিক সমাজ।

গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পরও মেয়রের শপথ না হওয়াকে সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী চেহারার প্রতিচ্ছবি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইশরাক হোসেনের পাশে দাঁড়ানো আন্দোলন আজ শুধু একটি ব্যক্তির নয়, বরং এটি একটি প্রজন্মের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই হয়ে উঠছে।

শপথে বাধা দেওয়ার যেকোনো উদ্যোগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। সময় এখনও আছে—সরকার কি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি আন্দোলনের আগুনকে আরও জ্বালাবে?