বাদশাহে বাংলা হযরত শাহ জালাল (রহ.)-এর ৭০৬তম পবিত্র ওরশ মোবারক আজ

মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার: 
আজ ১৮ মে (শনিবার), উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফি সাধক, ইসলাম প্রচারক ও অলিতে বাংলার বাতিঘর হযরত শাহ জালাল মুজাররাদ ইয়ামেনী (রহ.)-এর ৭০৬তম পবিত্র ওরশ মোবারক। প্রতিবছরের মতো এবারও ওরশ উপলক্ষে সিলেট নগরীর পবিত্র হযরত শাহ জালাল (রহ.) দরগাহ শরীফে দেশের নানা প্রান্ত থেকে লাখো ভক্ত-অনুরাগী ও মুরিদান সমবেত হয়েছেন।

শাহজালাল (রহ.) ছিলেন এমন একজন মহাপুরুষ, যিনি শুধু ইসলাম প্রচার-প্রসারে অসামান্য ভূমিকা রাখেননি, বরং আধ্যাত্মিক শক্তি, মানবতা, ত্যাগ ও দরবেশি জীবনের মাধ্যমে হাজারো মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন, সংগ্রাম, ও দর্শন আজও জাতির অনুপ্রেরণা।

বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক ইতিহাসের অন্যতম স্তম্ভ :হযরত শাহ জালাল (রহ.) ছিলেন ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম, যাঁরা ইসলামের বাণী নিয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। ইয়ামেন থেকে আগত এই মহান সাধক ১৩০৩ সালে সিলেটে আগমন করেন এবং ঐতিহাসিক যুদ্ধে অংশ নিয়ে হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করেন। পরবর্তীতে তিনি সিলেট অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন এবং অসংখ্য মানুষ তার দ্বারা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ধারক এই ওরশ মোবারক :ওরশ শরীফ উপলক্ষে শাহজালাল (রহ.)-এর দরগা এলাকায় জেয়ারত, মিলাদ মাহফিল, জিকির-আসকার, কোরআন খতম ও তবরুক বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। ভোর থেকেই দেশ-বিদেশের ভক্ত-অনুরাগীরা দরগা প্রাঙ্গণে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকে মানত, নফল নামাজ ও দান-খয়রাত করে শাহজালাল (রহ.)-এর রুহের মাগফিরাত কামনা করছেন।

সকাল থেকে সিলেটের দরগা এলাকা উৎসবমুখর পরিবেশ ধারণ করেছে। সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

আশার প্রার্থনা: রহমতের চাদরে ঢাকা হোক বাংলাদেশ :আজকের এই পবিত্র দিনে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে দোয়া চলছে—

“হে আরশের মালিক! হযরত শাহ জালাল (রহ.) ও তাঁর সঙ্গে আগত ৩৬০ আউলিয়ার উসিলায় এই বাংলাদেশকে রহমতের চাদরে ঢেকে দিন। অশান্তি, দাঙ্গা, দুর্নীতি ও বৈষম্যের ঘোর অন্ধকার থেকে এই দেশকে মুক্ত করুন।”

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ সকলেই দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য শাহজালাল (রহ.)-এর ওরশে দোয়া করছেন।

সিলেটে অতীতের ধারাবাহিকতায় ওরশ আয়োজন :শাহজালাল দরগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, এবারের ওরশেও আগত ভক্তদের জন্য লঙ্গর বিতরণ, ওজু-গোসলের সুব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সহায়তা রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে এই আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে।

বাংলার আধ্যাত্মিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ হযরত শাহ জালাল (রহ.) শুধু ধর্মীয় নেতা নন, তিনি মানবতার আলোকবর্তিকা। তাঁর ত্যাগ, সেবা ও দয়ার বার্তা আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়। এই পবিত্র ওরশ মোবারকে সকলের জন্য কামনা করি শান্তি, মাগফিরাত ও আল্লাহর অশেষ রহমত।