সহিংসতা নয়, সুস্থ মানসিকতাই পারে সমাজ ও রাষ্ট্র বদলে দিতে

খুন-খারাপি চায় না কোনো সুস্থ মানুষ, প্রয়োজন নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের জাগরণ

✍️ মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এক অস্থির সময় পার করছি আমরা। সমাজের এক শ্রেণির মানুষ যখন হিংসা, ঘৃণা, দমন-পীড়ন ও চরমপন্থার মাধ্যমে নিজেদের আদর্শ বা মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তখন সুস্থ বোধসম্পন্ন সাধারণ মানুষের বিবেক জেগে ওঠে। তারা জিজ্ঞেস করে—এই কি সভ্যতার পথ? এই কি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত রূপ?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সহিংসতা কখনোই কোনো সমাধান নয়। সহিংসতা যখন শুরু হয়, তখন তা কেবল একটি পক্ষের ক্ষতি করে না; বরং তা গোটা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবিক গড়নকে বিপর্যস্ত করে তোলে। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ জানে—প্রকৃত পরিবর্তন আসে যুক্তি, সহানুভূতি, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং আইনি পন্থায়।

একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনোই খুন, মারধর, সন্ত্রাস বা নৃশংসতার পথ বেছে নেয় না। তার ভিতরে থাকে বিবেক, থাকে আত্মশুদ্ধির ইচ্ছা। সে জানে—সহিংসতা সমাজে আতঙ্ক ছড়ায়, বন্ধ করে দেয় সংলাপের দরজা, ধ্বংস করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানের ভিত্তি।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, রাজনীতি, ধর্ম, জাতিগত পরিচয়, এমনকি সামাজিক মিডিয়ার গুজবকে কেন্দ্র করে অনেকেই হঠাৎ করে হিংস্র হয়ে উঠছে। অথচ এই সকল উত্তেজনার পেছনে কাজ করছে অজ্ঞতা, অপপ্রচার এবং বিকৃত মানসিকতা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে সহিংসতার মূল শেকড় হচ্ছে অশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি, এবং সুশাসনের অভাব। পরিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবখানেই যদি মানবিক মূল্যবোধ, সহমর্মিতা ও যুক্তিবাদী চিন্তার চর্চা না হয়, তাহলে আগামী প্রজন্ম হবে অনিয়ন্ত্রিত ও প্রতিক্রিয়াশীল।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক সময় তরুণরা উত্তেজনার বশে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে, যা মূলত তাদের দিকভ্রান্ত মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু যদি তাদের মধ্যে আত্মপরিচয়, সঠিক মূল্যবোধ ও বিবেকবোধ জাগ্রত করা যায়, তাহলে তারাই হবে সমাজ পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার।

আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি সুস্থ ধারার সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা। সেই চিন্তা হবে সহনশীল, যুক্তিনির্ভর, মানবিক ও প্রগতিশীল। যেখানে ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু থাকবে না ঘৃণা বা হানাহানি।

আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তর—পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং মিডিয়া—সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণে অংশ নেওয়ার। এই দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, এই দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের।

“এএনবি২৪ ডট নেট”-এর পক্ষ থেকে আমরা বিশ্বাস করি, একটি সুস্থ, মানবিক ও সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানুষকে সচেতন করা। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে আলো ছড়ানো—নেতিবাচকতা নয়, বরং ইতিবাচক মূল্যবোধকে সামনে আনা। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, মানুষের কথা বলার, শোনার ও বোঝার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে।

আমরা চাই, প্রতিটি পাঠক, নাগরিক, তরুণ-তরুণী নিজের ভিতরের মানসিকতাকে প্রশ্ন করুক: আমি কি অন্যের প্রতি সহনশীল? আমি কি যুক্তি দিয়ে কথা বলি? আমি কি সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছি?

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। আমাদের মানুষের ভেতরে রয়েছে অসীম শক্তি, প্রেম, পরিশ্রম এবং সহানুভূতি। শুধু প্রয়োজন সেই শক্তিকে সুস্থ পথে ব্যবহার করার, মনকে নির্মল রাখার, এবং মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচার।

সহিংসতা নয়—ভবিষ্যৎ নির্মাণ হোক জ্ঞান, ন্যায়, ভালোবাসা আর শান্তির শক্তিতে।