
মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার (১৪ মে) এই তিনজনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামসেদ আলমের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—মাদারীপুর সদর উপজেলার এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) এবং ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) মধ্যরাতে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে নির্মমভাবে খুন হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য, তখন তার মোটরসাইকেলের সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ থেকে সৃষ্টি হয় বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি। হঠাৎই দুর্বৃত্তরা সাম্যকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
সঙ্গে থাকা সহপাঠীরা রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে রাত ১২টা ৩০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্য হত্যার সংবাদ ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। মধ্যরাতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রদল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ জানানো হয়। হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের পক্ষ থেকে।
আজ বুধবার (১৪ মে) জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাম্যর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকগণ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থী। উপাচার্য সাম্যর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এটি একটি অমানবিক ও বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব যাতে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায়।”
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সূত্র পাওয়া গেছে এবং ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কারণ ও অন্যান্য জড়িতদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি তাৎক্ষণিক উত্তেজনার ফল, তা নির্ধারণে আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি।”
শাহরিয়ার আলম সাম্য ছিলেন মেধাবী ও সংগঠক হিসেবে পরিচিত। ক্যাম্পাস রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয়তা, সমাজ ও রাষ্ট্র বিষয়ক সচেতন চিন্তা তাঁকে সহপাঠীদের কাছে প্রিয় করে তুলেছিল। তার অকাল মৃত্যুতে বন্ধু ও শিক্ষকদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এই হত্যাকাণ্ডে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে—হত্যা পরিকল্পিত ছিল কি না, হত্যাকারীরা আদৌ রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত কি না, নাকি কেবল রাস্তায় বিরোধ থেকেই এই রক্তপাত? সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্তকারী সংস্থা। meanwhile, সাম্যের রক্ত যেন না ঝরে নিষ্ফলভাবে—এটাই এখন ছাত্রসমাজের দাবি।