আফতাবনগরে রাজউকের অভিযান, পাঁচ ভবনের বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর আফতাবনগর এলাকায় আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অভিযান পরিচালনা করেছে। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল অনুমোদনহীন ও নিয়মবহির্ভূত নির্মাণকাজ বন্ধ করা এবং শহরের পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে মোট আটটি নির্মাণাধীন ভবনে সরেজমিনে তল্লাশি ও পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি ভবনে অনুমোদনবিহীনভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে ওই পাঁচটি ভবনের বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ করা হয় এবং ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, আফতাবনগরের বিভিন্ন সড়ক ও ব্লকে অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক ভবন মালিক। এতে একদিকে যেমন জননিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি শহরের পরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

বিনা অনুমতিতে নির্মিত ভবনগুলোতে যথাযথ নকশা বা নির্মাণ সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুর রহমান বলেন, “রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের নির্মাণকাজ করা যাবে না। এ ধরনের নির্মাণকে চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যারা অনুমোদন না নিয়ে নির্মাণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।”

তিনি আরও জানান, অভিযানে দেখা গেছে—কিছু নির্মাণাধীন ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হলেও সেসব ভবনের কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়া নকশা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল না। তাই এসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।

অভিযানের সময় স্থানীয় বাসিন্দারা রাজউকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তারা বলেন, “এই এলাকায় দিনের পর দিন অনিয়ম হচ্ছে, কিন্তু কেউ দেখছে না। এখন অন্তত কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছে দেখে ভালো লাগছে।”

তবে তারা আরও জানান, রাজউকের অভিযান যেন নিয়মিত হয় এবং কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চাপে এসব অভিযান বন্ধ না হয়ে যায়। এলাকাবাসীর মতে, রাজউক যদি নিয়মিত তদারকি করে, তবে আফতাবনগর একটি পরিকল্পিত আবাসন এলাকায় পরিণত হবে।

রাজউক এর আগেও একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছে, ঢাকা শহরে যে সকল ভবন অনুমোদনবিহীনভাবে নির্মাণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। আফতাবনগরের অভিযানে সেই অবস্থানেরই প্রতিফলন দেখা গেছে।

ভবিষ্যতে যেন অনুমোদনবিহীন নির্মাণ বন্ধ হয়, সে লক্ষ্যে রাজউক আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করছে। তাছাড়া ড্যাপ (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) অনুসারে যেসব এলাকা নির্ধারিত আছে, সেখানে পরিকল্পনার বাইরে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলেও সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।

রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, ভবিষ্যতেও রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় এমন অভিযান পরিচালনা করা হবে। শহরের যেকোনো কোণে যদি কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে নির্মাণকাজ চালায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “রাজধানীকে বসবাসযোগ্য ও পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এই অনিয়মের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এটি শুধু রাজউকের একার দায়িত্ব নয়, নাগরিকদের সচেতনতারও প্রয়োজন রয়েছে।”

রাজউকের এই অভিযান শুধু আফতাবনগরের জন্য নয়, বরং গোটা ঢাকা শহরের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা। আইনের শাসন ও শহরের নিয়মতান্ত্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।