স্বাস্থ্যসেবায় মননশীলতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করুন”—সিভিল সার্জন সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত সিভিল সার্জন সম্মেলনে চিকিৎসকদের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতা, মননশীলতা, সৃজনশীলতা ও সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (১২ মে) রাজধানীর প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে তিনি এ আহ্বান জানান।

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনরা উপস্থিত হয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা ও জনগণের আস্থা ফেরাতে এই সম্মেলনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“স্বাস্থ্যসেবা যে স্বাস্থ্যহীন সেটা আমরা সবাই বুঝি এবং একে অপরকে দোষ দেই। কিন্তু দোষ দিলে তো স্বাস্থ্যহীনতা দূর হয়ে যাবে না। আমাদের নিজেদের মনকে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন,“আমাদের যতটুকু চিকিৎসা সরঞ্জাম বা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তার মধ্যেই যদি মন-মানসিকতা ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে অন্তত ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন হবে।”

তাঁর বক্তব্যে আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতে আত্মসংযম, উদ্ভাবন ও সেবার মনোভাব গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়।

সম্মেলনে উপস্থিত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন,“কোভিড মহামারিতে এবং সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনের সময় চিকিৎসকরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, আমি তাদের আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।”

তিনি সিভিল সার্জনদের ‘স্বাস্থ্যখাতের কাণ্ডারি’ আখ্যা দিয়ে বলেন,“স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সফলতা থাকলেও ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও জনবলের ঘাটতির কারণে এখনও আমরা পিছিয়ে। কিন্তু মেধা ও মননের প্রয়োগে সিভিল সার্জনরা এ ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারেন।”

এসময় তিনি জানান,“সাত হাজার সুপার নিউমারি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রমোশন প্রক্রিয়া চলমান। শুধু ডাক্তার নয়, শিগগিরই নার্সও নিয়োগ দেওয়া হবে।”

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. সাইয়েদুর রহমান বলেন,“প্রমোশন, পদায়ন, বাজেট এবং ওষুধের অপ্রতুলতা—এই চারটি সমস্যা সমাধান করতে পারলেই স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।”

তিনি জানান, স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আধুনিক ও ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে ‘ইউনিক হেলথ কার্ড’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ডিজিটাল রেকর্ড আকারে সংরক্ষিত থাকবে, যা চিকিৎসাসেবায় স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বাড়াবে।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা সিভিল সার্জন ড. মো. জিল্লুর রহমান, যিনি মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং বলেন,“আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে বাজেট বরাদ্দ, পদায়ন ও সরঞ্জামের সংকট দূর করা গেলে মাঠপর্যায়ে চিকিৎসাসেবা আরও গতিশীল হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু জাফর বলেন,“আমরা চাই চিকিৎসক সমাজ সমাজের আস্থা অর্জন করুক। তার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি মনোভাবের পরিবর্তন প্রয়োজন।”

প্রথমবারের মতো আয়োজিত সিভিল সার্জন সম্মেলন দেশের স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সমস্যা এবং করণীয় নির্ধারণে এক যুগান্তকারী সূচনা বলেই বিবেচিত হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর বাস্তবভিত্তিক ও চিন্তাশীল বক্তব্য এই খাতের জন্য একটি দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কী ধরনের কর্মপরিকল্পনা ও সুপারিশমালা গৃহীত হয়, সেটিই এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়।