হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র আইভী গ্রেপ্তার, এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়া

মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে সাবেক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর গ্রেপ্তার। শুক্রবার ভোররাতে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকার নিজ বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারের আগে তিনি জনসম্মুখে বলেন, “জয় বাংলা বলা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমি সেই অপরাধের অপরাধী হতে চাই।”

আইভীর এই বক্তব্য ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে এবং সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একজন প্রবীণ, জনপ্রিয় এবং রাজপথে সক্রিয় রাজনীতিবিদের এভাবে গ্রেপ্তার হওয়া, বিশেষ করে একটি হত্যা মামলায়, জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে স্থানীয় শতাধিক সাধারণ মানুষ ও আইভীর সমর্থকরা তার বাসভবনের সামনে জড়ো হন। পুলিশের গতিবিধি দেখে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং রাতভর স্লোগান দিতে থাকেন, “আইভী আপাকে ছাড়ো, আমরা কিছুই শুনতে চাই না”, “জয় বাংলা কোনো অপরাধ নয়”।

ভোররাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য তার বাসভবনে প্রবেশ করে তাকে গ্রেপ্তার করে। সেসময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউ কেউ পুলিশকে প্রতিরোধ করারও চেষ্টা করেন।

আইভীর বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ ও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হয়তো একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত, যেখানে একজন জনপ্রিয় নেত্রীকে কৌশলে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই এই গ্রেপ্তার। মামলার বিস্তারিত বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

গ্রেপ্তারের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আইভী বলেন,

“জয় বাংলা বলাই যদি অপরাধ হয়, আমি সেই অপরাধের অপরাধী হতে চাই। এই স্লোগান দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে। আজ যদি এই স্লোগানই অপরাধ হয়, তাহলে সেই অপরাধ আমি বারবার করবো।”

তার এই বক্তব্য রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীকী স্লোগান “জয় বাংলা” নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থই কি আইভীকে দমন করার অপচেষ্টা?

আইভীর গ্রেপ্তারে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে এই গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করে বলেন,

“যে আইভী নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, তাকেই কি হত্যার মতো জঘন্য মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে?”

বিভিন্ন স্থানে আইভীর মুক্তির দাবিতে ছোটখাটো মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাকও দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে।

একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি হয়তো রাজনৈতিক মাঠে একধরনের ‘পুনর্বিন্যাস’ কৌশল। আইভীর মতো সাহসী ও সৎ রাজনীতিবিদের উপস্থিতি কিছু প্রভাবশালী মহলের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল অনেক আগেই।

তারা আরও বলেন, নির্বাচন, দলীয় কোন্দল এবং প্রশাসনিক প্রভাবের জটিল সমীকরণে এ ধরনের ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে।

আইভীর গ্রেপ্তার শুধুমাত্র একটি ব্যক্তির গ্রেপ্তার নয়, এটি একটি মতাদর্শের, একটি রাজনৈতিক দর্শনের উপর আঘাত হিসেবে অনেকেই দেখছেন। “জয় বাংলা” যদি আজ বিতর্কিত হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—আমরা কি আদৌ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আছি?

আইভীর মুক্তি ও মামলার স্বচ্ছ তদন্ত চেয়ে দেশের জনগণ এখন প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
পরবর্তী পদক্ষেপে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে—তা নির্ধারণ করবে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।