ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নতুন উত্তেজনা: বিমান হামলার পর সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের ঘরছাড়া হওয়ার হিড়িক

মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার
পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সদ্য চালানো হামলার পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত। নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) সংলগ্ন এলাকাগুলোতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষজন প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য হয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ফেলে পালিয়ে যাচ্ছেন।

 ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সুচেতগড় এবং জেওরা ফার্ম এলাকার গ্রামবাসীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ট্রাক, ট্রলি, এবং অস্থায়ী যানবাহনে করে সীমান্ত থেকে দূরের গ্রাম বা আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বেসামরিক নাগরিকদের এই আকস্মিক স্থানান্তর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, কতটা গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে।

পাঞ্জাব রাজ্যের ফিরোজপুর জেলার হুসেনিওয়ালা সীমান্তবর্তী অঞ্চল, যেখানে প্রায় ১২ থেকে ১৪টি গ্রাম সরাসরি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের সংস্পর্শে রয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতিও অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা, ঝুগে হাজারা সিং গ্রামের জিৎ সিং, বলেন, “এখানে ভয়ের এক অদৃশ্য ছায়া ঘোরাফেরা করছে। অনেকেই এখন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে সুরক্ষার আশায় যাচ্ছেন। তবে আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি যতটা সম্ভব মোকাবেলা করতে।”

যে গ্রামের অনেক পরিবার কাঁধে মালপত্র তুলে নিয়ে দ্রুত ঘর ছাড়ছে। ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে করে প্রয়োজনীয় আসবাব ও খাদ্যপণ্য নিয়ে নিরাপদ স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন তারা।তবে এমন আতঙ্কের মধ্যেও কিছু পরিবার এখনো নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ। তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি পরিবার থেকে একজন বা দুইজন সদস্য ঘরে থেকে যাবেন বাড়ি, জমি ও সম্পত্তির দেখাশোনা করার জন্য। যদিও রাতের অন্ধকারে গোলাগুলির শব্দ এবং যুদ্ধ বিমানের গর্জন তাদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের মধ্যে অজানা ভয় ও উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে। অনেকেই চিকিৎসা নিতে পারছেন না, কারণ নিকটবর্তী হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ভারতীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে কিছু সূত্র জানিয়েছে, এই সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ প্রকাশ্যে আসেনি।

 এই ধরনের পরিস্থিতি ২০১৬ সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরও দেখা গিয়েছিল, যখন যুদ্ধাবস্থা না থাকলেও সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার কারণে হাজার হাজার গ্রামবাসী তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার স্বার্থে ঘরছাড়া হয়েছিল।

বর্তমানে, একদিকে সীমান্ত উত্তপ্ত, অন্যদিকে দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বও একে অপরকে দায়ী করে চলেছেন। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ আবারও পরিণত হয়েছেন ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষের বলির পাঁঠা।ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা শুধু দুই রাষ্ট্রের সামরিক বা কূটনৈতিক সমস্যা নয়, এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে সীমান্তবর্তী অসংখ্য নিরীহ মানুষের জীবনে। আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতা ও বাস্তুচ্যুতির বাস্তবতা প্রতিনিয়তই মনে করিয়ে দিচ্ছে, যুদ্ধ কিংবা সংঘর্ষের মধ্যে আসলে কোনো বিজয়ী থাকে না – সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে নতুন কোনো ঘোষণা বা সরকারি পদক্ষেপ এলে আমরা পাঠকদের সামনে তা তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।