আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেড ক্রস জানিয়েছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ‘পৃথিবীর নরকে’ পরিণত হয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা তাদের অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। কারণ এরপর তাদের রসদ ফুরিয়ে যাবে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক এসব কথা বলেন। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।
তিনি বলেন, ‘আমরা গাজায় এখন নিজেদের এমন পরিস্থিতিতে দেখছি। যেটিকে আমাকে বলতে হবে পৃথিবীর নরক। মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার পায় না। গত ছয় সপ্তাহে, কোনো কিছু গাজায় ঢোকেনি।”
জেনেভা কনভেনশনের অভিভাবক সংস্থা আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট স্পেলজারিক প্রকাশ্যে বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা আন্তর্জাতিক আইনের ‘চরম লঙ্ঘন’।”
চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের অধীনে, গাজায় ইসরায়েলের অবস্থানের কারণে দখলদার শক্তিকে অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের খাদ্য ও ওষুধ নিশ্চিত করতে হবে এবং হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দিতে হবে। জেনেভা কনভেনশনটি অধিকৃত অঞ্চল থেকে পুরো জনসংখ্যার জোরপূর্বক স্থানান্তর নিষিদ্ধ করেছে।
স্পোলজারিক বলেন, “কোনো রাষ্ট্র, সংঘাতের কোনো পক্ষ... যুদ্ধাপরাধ না করার, গণহত্যা না করার, জাতিগত নির্মূল না করার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেতে পারে না। এই নিয়মগুলো প্রযোজ্য। এগুলো সর্বজনীন।”
তিনি আরো বলেন, “সামরিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, বারবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং তাদের বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস কর্তৃক যাচাই করা সাম্প্রতিক ৩৬টি বিমান হামলার মধ্যে নিহতরা সবাই নারী ও শিশু।
ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা বা গণহত্যা চালানোর অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
রেড ক্রস প্রধানের এই মন্তব্য জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর উদ্বেগের সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যা গাজায় একটি গোষ্ঠী হিসেবে তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, ইসরায়েল আল-মাওয়াসি এলাকায় তাঁবুতে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে, যেখানে তারা লোকজন সুরক্ষার জন্য যেতে বলেছিল।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মহাসচিব সতর্ক করে বলেছিলেন, গাজার ওপর ইসরায়েলের অবরোধ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করছে এবং এই অঞ্চলটি একটি ‘হত্যার ক্ষেত্র’ হয়ে উঠছে।
সোমবার জাতিসংঘের ছয়টি সাহায্য সংস্থার প্রধানরা গাজার জনগণকে বাঁচাতে এবং মৌলিক আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার আগে, গত ২ মার্চ থেকে গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রায় ১৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো তিন হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে গাজায় হামলা আরো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। নিহত ও আহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এএনবি২৪ ডট নেট"একটি বহুল পঠিত অনলাইন বাংলা সংবাদপত্র,
প্রকাশক, মোহাম্মদ মাহামুদুল হাসান কালাম,
প্রগতি স্বরণী, ঢাকা-১২২৯
+৯৬০৭৩৩৯৬৯১
+৮৮০১৬৪৭০৫৩৪৪৯
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ
ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন। anbnewsbd@gmail.com
২০১২-২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত – এএনবিটোয়েন্টিফোর ডট নেট