ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে ফেনীবাসীর রোষ: বিক্ষোভে উত্তাল শহর

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার, 

ফেনী, ৭ এপ্রিল: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্মম সামরিক অভিযান ও গণহত্যার প্রতিবাদে ফেনীবাসী রাস্তায় নেমে এসেছে। রোববার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ‘ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবার’-এর নেতৃত্বে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যা ফেনী শহরকে উত্তাল করে তোলে।

বিক্ষোভ মিছিলটি ফেনী শহরের ঐতিহ্যবাহী জহিরিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি খেজুর চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়ে অগ্রসর হয়। প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান।

মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা হাতে নিয়ে আসেন ফিলিস্তিনের পতাকা, কালো ব্যানার এবং বিভিন্ন প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা ছিল— “গাজা গণহত্যা বন্ধ কর”, “ইসরাইলি সন্ত্রাস বন্ধ কর”, “মুসলিম বিশ্ব জাগো” ইত্যাদি।

মিছিল শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা গাজায় চলমান নৃশংসতার তীব্র নিন্দা জানান এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

‘ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবী পরিবার’-এর সভাপতি মোঃ জাহিদ হাসান তার বক্তব্যে বলেন, “গাজায় প্রতিদিন শত শত নিরপরাধ নারী, শিশু ও বৃদ্ধ নিহত হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিবেক আজ নিষ্ক্রিয়। মানবাধিকারের নামে যারা বুলি আওড়ায়, তারাই আজ নীরব।”

স্থানীয় শিক্ষক নেতা অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ বলেন, “মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের মতো। একটি অঙ্গে ব্যথা হলে যেমন সমস্ত দেহই ব্যথা অনুভব করে, তেমনি ফিলিস্তিনের ব্যথা আমাদের সবার। আমরা যদি আজ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।”

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কলেজ ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “টেলিভিশনে যখন গাজায় শিশুদের মৃতদেহ দেখি, তখন আমার চোখে পানি চলে আসে। আমরা কী করতে পারি তা জানি না, কিন্তু অন্তত আমাদের কণ্ঠস্বর বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ করিম উল্লাহ বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য সাহায্য পাঠাতে চাই, কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের সরকার ও মুসলিম দেশগুলোর আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।”

সমাবেশে বক্তারা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তোলেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম দেশকে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য আরও তৎপরতা বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়।

বিক্ষোভ শেষে একটি প্রস্তাবনা পাস করা হয়, যেখানে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করা এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার দাবি জানানো হয়।

বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানানো হয়।

এই বিক্ষোভ ফেনীবাসীর সংহতি ও মানবতাবোধের又一次 পরিচয় বহন করে। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের সমর্থন ও সংহতি আরও একবার প্রদর্শিত হলো।