কমিশনের প্রতিবেদন: সাংবাদিকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া,বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

 অনলাইন ডেস্ক

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, এটি যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য। এর ফলে পেশায় স্বচ্ছতা বাড়বে। সাংবাদিকদের পেশাগত মানোনন্নয়ন হবে। আবার কেউ বলছেন, কমিশনের প্রতিবেদনে কিছু উদ্ভট প্রস্তাব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক কামাল আহমেদকে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। শনিবার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়।

কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশের মধ্যে বলা হয়, একই কোম্পানি বা মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে না। এক্ষেত্রে ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ হতে হবে। বিসিএস ক্যাডারদের এন্ট্রি ৯ম গ্রেডের যে বেতন, তার সঙ্গে মিল রেখে সাংবাদিকদের বেতন শুরু হবে। সাংবাদিকদের সহায়তায় সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছেন তারা। আর সাংবাদিকতা করতে হলে ন্যূনতম স্নাতক পাশের যোগ্যতা থাকতে হবে। এছাড়া কমিশনের মতে, গণমাধ্যমের মালিকানা একক হাতে কেন্দ্রীভূত থাকলে সেটাকে ব্যক্তি, পারিবারিক ও নিজস্ব গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে গণমাধ্যমকে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

এ ব্যাপারে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেখানে কিছু বাস্তব ও কিছু অবাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভট সুপারিশও স্থান পেয়েছে। নতুনত্ব এখানে অনুপস্থিত। তিনি বলেন, কে সাংবাদিক হতে পারবে, কে পারবে না তা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম আগেই ছিল। প্রশ্ন হলো, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত কি কার্যকর করা যাবে? অনেকেই হয়তো বলবেন, একজন আরজ আলী মাতুব্বরের জীবন কাহিনি কি এই ইতিহাস থেকে মুছে যাবে? একটি সার্টিফিকেট কি এক ‘অরাজক’ এবং ‘বিশৃঙ্খল’ অবস্থা থেকে সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত করতে পারবে?

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেহাল। কেউ বিনিয়োগ করতে আসছে না। এ অবস্থায় যখন মিডিয়া কমিশন বিসিএস ক্যাডারের মতো সাংবাদিকদের বেতন নির্ধারণ করতে চায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে-কমিশন সদস্যরা কি অন্য গ্রহের মানুষ! নাকি বড় হাউজের পাশে থেকে বাস্তবতাকে অস্বীকার করছেন! ব্যবসাটা যেখানে সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন, সেখানে বাস্তবকে অস্বীকার করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হবে-ছোট ছোট সংবাদমাধ্যমকে গলা চেপে হত্যা করা। তার মতে, সংবাদমাধ্যমে বেতন কাঠামো কেন সরকার নির্ধারণ করবে? শুধু সরকারি বিজ্ঞাপনের সুযোগ নিয়েই কি এই সিদ্ধান্ত চাপানো হচ্ছে? কেবল সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়েই কি একটা সংবাদপত্র টিকে থাকতে পারে? রাজনৈতিক সংবাদপত্র হয়তো পারে। এর একটা ম্যাজিক আছে বটে। এছাড়া কোন হাউজ কয়টা পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বৈধ যুক্তি নেই।

 

তিনি আরও বলেন, টেলিভিশনের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে তো কোনো বেতন কাঠামোই নেই। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বিগত সরকার অনেকগুলো স্যাটেলাইট টেলিভিশনের লাইসেন্স দিয়েছে। অপরদিকে আজকের সংবাদমাধ্যমের বেহাল এবং বিতর্কিত অবস্থানের পেছনে টেলিভিশন সাংবাদিকদের ‘অবদানই’ খুব বেশি। গুটিকয়েক মানুষের জন্য বিপুলসংখ্যক টেলিভিশন সাংবাদিক আজ নিজেদের পরিচয় ভুলতে বসেছেন। অতএব নির্বাচন যেহেতু সামনে, সেখানে এ ধরনের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়নযোগ্য। সেটা ভাবতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে-সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সব পাল্টে যায়। এবারও যে হবে না, এর নিশ্চয়তা কোথায়।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, মিডিয়া কমিশনের কিছু কিছু প্রস্তাব ভালো। তবে নতুনত্ব কিছু নেই। একেবারেই গতানুগতিক। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন বাস্তবতাবিবর্জিত অনেক সুপারিশ করেছে। যেমন বিসিএস ক্যাডারের মতো বেতন নির্ধারণ। এটা কি সব হাউজের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে?

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের লাইন দেখলে সেটি সহজে অনুমান করা যায়। কেউ নতুন বিনিয়োগ করতে আসছে না। প্রতিনিয়ত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার। বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমে চলছে অস্থিরতা। অনেকে নিয়মিত বেতনও দিতে পারছে না। সরকার মিডিয়াকে তাদের বিজ্ঞাপনের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় যখন কমিশন বিসিএস ক্যাডারের মতো সাংবাদিকদের বেতন নির্ধারণ করতে চাইলে অধিকাংশ মিডিয়া মারা পড়বে। তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় আমাকে বিস্মিত করেছে, কোন হাউজ কয়টা পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে সেটিও তারা ঠিক করে দিয়েছে। একটা মিডিয়া হাউজ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হাউজকে কবজা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাম্পেইন করে আসছিল। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বৈধ যুক্তি আছে কী? যার বৈধ টাকা আছে তিনি কেন একাধিক মিডিয়া করতে পারবে না। এক্ষেত্রে দেখতে হবে, এসব মিডিয়া নীতিমালা লঙ্ঘন করছে কিনা?

সাংবাদিক সংগঠনের সিনিয়র এ নেতা আরও বলেন, দুনিয়াজুড়ে অনেক মিডিয়া গ্রুপ রয়েছে। আমাদের একেবারেই কাছের দেশ ভারতে আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের অনেক পত্রিকা রয়েছে। ভারত সরকার কি এ ব্যাপারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে? গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ‘ওয়ান হাউজ, ওয়ান মিডিয়া’ করার প্রস্তাব করেছে। প্রশ্ন হলো-এটি যে উদ্দেশ্যমূলক নয়, তা কীভাবে বুঝব। ইতোমধ্যে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে এই কমিশনের সুপারিশমালায় একটি বড় বিজনেস হাউজের প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। আমারও মনে হচ্ছে, তেমনটি ঘটেছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, কমিশনের সবগুলো প্রস্তাব ও সুপারিশ পড়েছি। তবে সবগুলোই অত্যন্ত যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত মনে হয়েছে। প্রথমত, সাংবাদিকদের বেতন। এটি যৌক্তিক প্রস্তাব। কারণ ভালো বেতন না পেলে মেধাবী লোকজন এ পেশায় আসবে না। অপরদিকে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ন্যূনতম গ্রাজুয়েশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিও যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। কারণ গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। মানুষ এখান থেকে অনেক কিছু শিখে। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিজেদের শিক্ষাগতযোগ্যতা না থাকলে, তা গণমাধ্যমের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করে গণমাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তার মতে, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে গণমাধ্যমের পেশাগত মান বাড়বে। এটি শুধু গণমাধ্যম শিল্প নয়, পুরো দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যও জরুরি।

 

প্রকাশকঃএম এইচ, কে,নিউজ এডিটর, কালাম , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net