প্রতিবেদনটি লিখেছেন ,মো. শাহজাহান বাশার
স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি একটি গভীর, দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই সমস্যা দেশের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। দুর্নীতি রোধে সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের প্রচেষ্টা যদি সুদৃঢ়, সময়োপযোগী এবং কার্যকরী হয়, তবে বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
এই প্রতিবেদনে, আমরা আলোচনা করবো দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজনীয় কিছু শর্ত এবং কার্যকর পদক্ষেপ যা বাস্তবায়িত হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
দুর্নীতি নির্মূল করতে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো দেশের আইনি কাঠামো এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী আইন ও নীতিমালা গঠন করা, এবং এগুলোর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ এবং কার্যকর তদন্ত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তি কার্যকর হয়।
এছাড়াও, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তার প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক ক্ষমতাগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে কাজ করবে।
দুর্নীতির মূল উৎসের একটি হলো সরকারি কর্মকাণ্ডের অস্বচ্ছতা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রকৃত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সকল সরকারি কার্যক্রমের তথ্য জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে, যেন জনগণ সহজেই বুঝতে পারে সরকারি প্রকল্প, বাজেট, বরাদ্দের যথার্থতা।
এছাড়াও, সরকারী কর্মকর্তাদের এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজে স্বচ্ছতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তবে এই কমিশনকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন এবং শক্তিশালী করতে হবে। কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে এর কার্যক্রমকে মুক্ত রাখা, এবং দুর্নীতির তদন্তে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, সরকারি সংস্থা এবং কর্মচারীদের উপর দৃঢ় নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা নিজেদের দায়িত্বে গাফিলতি না করে।
জনগণের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির খারাপ প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে।
বিশেষ করে, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা এবং দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে। তরুণদের সৎ এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুর্নীতি কমানোর এক কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে।
রাজনৈতিক নেতা এবং দলের প্রতি জনগণের আস্থা গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক নেতাদের নিজেদের মধ্যে স্বচ্ছতা, নৈতিকতা এবং সৎ নেতৃত্বের প্রমাণ রাখতে হবে। যখন দেশের নেতা ও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবেন, তখন তা সামগ্রিকভাবে দেশের সব পর্যায়ে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের ভিতরে দুর্নীতি বিরোধী নীতি গড়ে তুলতে হবে এবং সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে এককভাবে কোনো দেশই সফল হতে পারে না, বিশেষ করে যখন এটা আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা এবং দেশীয় আইনকে সমন্বিত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে।
সুশীল সমাজের প্রতিটি স্তর দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে এনজিও এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সংগঠনগুলো জনগণকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে সাহায্য করতে পারে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারে।
অপরদিকে, মিডিয়াও দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সমাজের সকল স্তরের মানুষ যদি একযোগভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে, তবে তা দুর্নীতির বিস্তার রোধ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
তথ্য প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা দুর্নীতি কমাতে সহায়ক হতে পারে। সরকারি প্রকল্প, তহবিল বরাদ্দ এবং জনগণের ট্যাক্স প্রদান সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ডিজিটালভাবে জনগণের কাছে প্রকাশ করা যেতে পারে।
ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করার ফলে লেনদেনের স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ত্রুটিপূর্ণ বা দুর্নীতিগ্রস্ত কাজ সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। সরকারি ওয়েবসাইট এবং অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের অভিযোগ এবং মতামত তুলে ধরতে পারবেন, যা দুর্নীতি রোধে সহায়ক হবে।
দুর্নীতি রোধে একটি দৃঢ়, সুনির্দিষ্ট এবং সুসংহত পদক্ষেপ প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে নয়, বরং জনগণ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি বিরোধী ব্যবস্থা কার্যকর করতে এবং দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সবার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে সরকারের উচিত এককভাবে নয়, বরং জনগণ এবং দেশের সকল স্তরের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্নীতি রোধের জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া। এতে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ, যা ভবিষ্যতে আমাদের প্রজন্মের জন্য এক শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন
মোঃ শাহজাহান বাশার
সম্পাদক ও প্রকাশক: দৈনিক জনতার মতামত
ও স্টাফ রিপোর্টার ,জাতীয় দৈনিক মানবাধিকার প্রতিদিন ,
এএনবি২৪ ডট নেট,ARS 24 News,
এএনবি২৪ ডট নেট"একটি বহুল পঠিত অনলাইন বাংলা সংবাদপত্র,
প্রকাশক, মোহাম্মদ মাহামুদুল হাসান কালাম,
প্রগতি স্বরণী, ঢাকা-১২২৯
+৯৬০৭৩৩৯৬৯১
+৮৮০১৬৪৭০৫৩৪৪৯
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ
ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন। anbnewsbd@gmail.com
২০১২-২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত – এএনবিটোয়েন্টিফোর ডট নেট