আজ ১৩ রমজান (শুক্রবার) । রহমতের দশক শেষ হয়ে মাগফিরাত দশকের তৃতীয় দিন। এইতো এলো আল্লাহর বান্দাদের জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে পরিশুদ্ধ (খাঁটি) মানুষ বানাবার এবং রহমত, বরকত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে মাহে রমজান। দেখুন, সেই সুন্দর রহমতের দিনগুলো কত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাকি চলুন বাকি দিনগুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগাই। একটি সুন্দর , উন্নত জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। ইসলাম, একটি পূর্ণাঙ্গ দীন বা জীবন বিধান হিসেবে সব ক্ষেত্রে মানুষের মানবিক চাহিদা, শারীরিক যোগ্যতা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করেছে।
ইসলাম মানুষের ওপর এমন কোনো বিধিবিধান চাপিয়ে দেয়নি- যা মানুষ পালন করতে অক্ষম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- 'লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস'আহা' অর্থাৎ আল্লাহ্ কোনো মানুষকে এমন কিছু চাপিয়ে দেন না বা এমন কোনো কষ্ট দেন না- যা তার সাধ্যতীত বা সে করতে অক্ষম। ইসলামের অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় বিধান 'রোজা'র ক্ষেত্রেও ইসলামের এ উদারতা এবং মহানুভবতার ব্যতিক্রম হয়নি। ইসলাম কতিপয় ব্যক্তিদের রমজান মাসে রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অবশ্যই তার কাজা আদায় করতে হবে।
যেসব ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে রোজা না রাখার অনুমতি আছে, তারা হলেন- ১. গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গভ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ২. পিপাসায় মরণাপন্ন কিংবা কঠিন রোগগ্রস্ত হলে ৩. শিশুর পানীয় মায়ের স্তনে দুধ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে ৪. রোগ-বা অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার
আশঙ্কা থাকলে ৫. হঠাৎ পেটে বেদনা হয়ে অস্থিরতা দেখা দিলে ৫. সাপে কাটলে ৬. মেয়েলোকের হায়েজ (মাসিক স্রাব), নেফাস (প্রসবোত্তর স্রাব) হলে ৭. বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা অতিশয় দুর্বল ও শক্তিহীন হলে। ৮. কোনো হিংস্র জন্ত দংশন করলে এবং এতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে ৯. মুসাফিরের ক্ষেত্রে রোজা রাখা ও না রাখা তার ইচ্ছাধীন। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- শরহে মাআনিউল আছার, দুররুল মোখতার, রাদ্দুল মোহতার, ফাতওয়া-ই-আলমগীরী, ফাতওয়া-ই-রেজভিয়্যাহ, হেদায়া এবং বাহারে শরিয়ত ইত্যাদি ফিকাহ গ্রন্থাবলি)। প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানকে মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহ তায়ালা ও তার প্রিয় হাবিব নবীকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি লাভের জন্য তৎপর থাকা উচিত।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা) থেকে বর্ণিত, নূরনবী হযরত রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'রয ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ্ তায়ালার স্মরণে তন্ময় থাকে, তার পাপরাশি মোচন হয়ে যায়। প্রার্থনাকারী কখনো বিফল মনোরথ হয় না।' তবে, সবাইকে এ কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য হালাল উপার্জন ভক্ষণ করা এবং এ জন্য হালাল রিজিক তালাশ করা প্রধানতম শর্ত। নূরনবী হযরত রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র (সর্ব প্রকার দোষ ও ত্রুটিমুক্ত), তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া ভিন্ন কিছুই কবুল করেন না। আর আল্লাহ তার রাসুলগণকে যেই আদেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরও সেই একই আদেশ দিয়েছেন। অতঃপর রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বাণী পাঠ করলেন- (যার অর্থ) 'হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র খাবার আহার করুন এবং নেক কাজ করতে থাকুন।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে মুমিনগণ! আমার দেয়া পবিত্র রিজিক হতে তোমরা আহার কর। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করলেন- এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দূরদূরান্ত পথ সফর করেছে, ফলে যার মাথার চুল এলোমেলো এবং শরীর ধুলো-বালিতে মলিন এমতাবস্থায় সে আকাশের পানে দুই হাত তুলে 'ইয়া রব... ইয়া রব' (ওহে প্রভু, ওহে প্রভু) শব্দে প্রার্থনা করে থাকে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে নিত্য হারামই খেয়ে থাকে। তাহলে সে কেমন করে তার প্রার্থনার জবাব পাবে?' অর্থাৎ মুসাফির হওয়া সত্ত্বেও অবৈধ উপার্জন ও তা ভক্ষণের ফলে তার দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা। (মুসলিম)।
জলিলুল কদর সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী হযরত রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'হালাল ও বৈধ পন্থায় জীবিকা উপার্জন করা ফরজ নামাজের পর ফরজ' (বায়হাকি)।
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হালাল বা বৈধ পন্থায় আয়-রোজগার এবং হালাল বা বৈধ উপায়ে আহরিত রিজিক বা সম্পদ হতে পানাহার না করলে মাহে রমজানের রোজা এমনকি কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা। আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, মাহে রমজানে রোজা রেখে রোজাদাররা এক ফোঁটা পানি এমনকি মুখের সামান্য লালা বা থুথু গিলে ফেলতেও ভয় পায় এবং এ জন্য সদা সর্তক থাকে, যাতে করে রোজা নষ্ট না হয়। রোজাদারের এই যে সচেতনতা- এটা খুবই প্রশংসনীয়ও বটে। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক রোজাদারের এমনই সচেতন থাকা প্রয়োজন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- সেই একই রোজাদার দিব্যি অন্যের হক গিলে ফেলতে কোনো প্রকার দ্বিধা করে না! শুধু রোজার মাসে নয়, বরং এটি প্রত্যেক মাসে, প্রত্যেক দিনে এবং প্রতি ক্ষণে তথা সারা জীবনে স্মরণ রাখা উচিত। তাহলেই আমাদের ইবাদাত এবং দোয়া মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। আল্লাহ পাক আমাদের হালাল উপার্জনের মাধ্যমে অর্জিত রিজিক থেকে পানাহার করে রোজাসহ যাবতীয় ইবাদাত-বন্দেগি করার তাওফিক দিন। আমিন! বিহুরমাতি রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সংগঠক, উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান - গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা
এএনবি২৪ ডট নেট"একটি বহুল পঠিত অনলাইন বাংলা সংবাদপত্র,
প্রকাশক, মোহাম্মদ মাহামুদুল হাসান কালাম,
প্রগতি স্বরণী, ঢাকা-১২২৯
+৯৬০৭৩৩৯৬৯১
+৮৮০১৬৪৭০৫৩৪৪৯
বি: দ্র: প্রকাশিত সংবাদে কোন অভিযোগ
ও লেখা পাঠাতে আমাদের ই-মেইলে যোগাযোগ করুন। anbnewsbd@gmail.com
২০১২-২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত – এএনবিটোয়েন্টিফোর ডট নেট