
ইসলামিক স্কলারঃ মাওঃ মুফ্তি এম ফাহাদ হোসাইন
বুড়িচং, কুমিল্লা।
এ বছরের ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
*** সদকাতুল ফিতর কেন আদায় করবে?
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করা হয়েছে, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৯।
**কে আদায় করবে?
প্রত্যেক স্বাধীন মুসলমান, ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় যার মালিকানায় মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য (ঘর, কাপড়, গাড়ি ইত্যাদি) এর অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ (৫২.৫ তোলা বা ৬১২.৩৬ গ্রাম রুপা কিংবা তার সমমূল্যের) যেকোনো সম্পদ (যাকাতযোগ্য হোক চাই না হোক) থাকবে, তার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
বাদায়েউস সানায়ে, ২/১৯৯; আল-বাহরুর রায়েক, ২/৪৩৯-৪৪০; মাবসূত, সারাখসি, ৩/১০৪।
** কী দিয়ে আদায় করবে?
সদকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। যথা: যব, খেজুর, ভুট্টা, পনির, কিশমিশ ও গম। এ পাঁচটি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো একটি দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে।
এই পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, ভুট্টা, পনির ও কিশমিশ দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’ (৩ কেজি ২৭০ গ্রাম) দ্রব্য দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা সা’ (১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম) দ্রব্য দিতে হবে। তবে নির্ভরযোগ্য মতানুসারে উপযুক্ত খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে সেগুলোর মূল্য আদায় করারও অবকাশ আছে। তাই উল্লেখিত খাদ্যদ্রব্যগুলো থেকে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার সমমূল্যও সদকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করা যাবে।
৪. মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ১০৩৭১, ১০৩৬৯/১০২১
** কখন আদায় করবে?
সদকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আদায় করা উত্তম। অবশ্য কোনো কোনো সাহাবি থেকে ঈদের কয়েকদিন পূর্বেও ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে।
সুতরাং সদকাতুল ফিতর রমযানের শেষ দিকেই আদায় করা উচিত। এতে করে গরিব লোকদের ঈদের সময়ের প্রয়োজনপূরণেও সহায়তা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় না করলে পরবর্তী সময়ে তা আদায় করে দেওয়া আবশ্যক।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৬০৯, ১৬০৬।
** সদকাতুল ফিতর কাকে প্রদান করবে?
যারা যাকাত পাওয়ার অধিকার রাখে তারাই সদকাতুল ফিতরের হকদার। যেসব খাত ও ব্যক্তি যাকাতের হকদার নয়, তাদের ফিতরা দেওয়া যাবে না।
ফাতাওয়ায়ে শামি, ৩/৩২৫।
উল্লেখ্য, একজনের ফিতরা একজন ফকিরকে দেওয়া উত্তম। একজনের ফিতরা কয়েকজন ফকিরকে বণ্টন করে দেওয়া মাকরুহে তানযিহি বা অনুচিত। তবে কয়েকজনের ফিতরা একজনকে দেওয়া জায়েয আছে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
ফাতাওয়ায়ে শামি, ৩/৯২১।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের রমযানের সকল আমল সুচারুরূপে আনজাম দেওয়ার তাওফিক দান করুন এবং তাকওয়া ও ক্ষমার মহাদৌলত নসিব করুন। আমিন।