
লেখক :মোঃ শাহজাহান বাশার
স্টাফ রিপোর্টার ,এএনবি২৪.নেট,ও
সমপাদক ও প্রকাশক দৈনিক জনতার মতামত
আজকাল আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সুদের ব্যাপারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুদের বিষয়ে ইসলামের অবস্থান স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট। ইসলামে সুদকে সম্পূর্ণ হারাম (নিষিদ্ধ) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, এবং এর সাথে সম্পর্কিত যে কোনও কাজ বা ব্যবসা করাও মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।
কুরআনে সুদের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা:
কুরআন মাজিদে সুদের সম্পর্কে কঠোর বাণী এসেছে। আল্লাহ্ তাআলা সূরা আল-বাকারা (২: ২৭৫-২৭৯) আয়াতে বলেন:
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামত দিবসে সেইভাবে উঠবে, যেমনটি সে ব্যক্তি উঠবে যে শয়তান দ্বারা পাগল হয়ে যায়। এটি এই জন্য যে, তারা বলে— ‘বেচাকেনা তো ঠিক যেমন সুদও ঠিক।’ অথচ আল্লাহ্ সুদকে হারাম করেছেন এবং বেচাকেনাকে হালাল করেছেন।”
এছাড়াও সূরা আল-ইমরান (৩: ১৩০) এবং সূরা রুম (৩০: ৩৯) এ সুদ গ্রহণের কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
নবী করিম (সঃ) এর সুদের বিরুদ্ধে হাদিস:
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সুদ সম্পর্কে অত্যন্ত কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন:
“সুদ গ্রহণকারী, সুদ দেওয়ার এবং সুদ লিখে দেয়া উভয় পক্ষই আল্লাহ্ এবং তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।” (সহীহ মুসলিম)
এছাড়াও, তিনি সুদের কাজে যুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে ইসলামের দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে যে, সুদের মাধ্যমে যে অর্থ অর্জন করা হয় তা মুসলমানদের জন্য হারাম এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সুদের কর্মের প্রভাব:
ইবাদত তথা নামাজ, রোজা, যাকাত বা হজ কবুল হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হল, কর্ম ও জীবনব্যবস্থা ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি সুদের কাজে জড়িত থাকে, তার ইবাদত কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি সুদে জড়িত থাকে, তার আমল কবুল হয় না।” (সহীহ বুখারি)
এটি প্রমাণ করে যে, সুদের কাজ থেকে বিরত না থাকলে ইসলামী বিধান অনুযায়ী তার সব ইবাদত ও কাজের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
ইবাদতের শুদ্ধতা ও সুদের পরিহার:
ইবাদত আদায়ের পূর্বে একজন মুসলমানের উচিত, সমস্ত হারাম উপার্জন থেকে বিরত থাকা এবং ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করা। সুদের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন বা এর সাথে কোনোভাবে জড়িত হওয়া ইবাদতের শুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই, মুসলমানদের জন্য ইবাদতকে কবুল করানোর জন্য সুদের কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা আবশ্যক।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সুদের কাজ ইসলামে হারাম। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী, সুদের মাধ্যমে উপার্জন করা এবং এতে জড়িত থাকা ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করে। একজন মুসলমানের জন্য এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনুসরণ করা উচিত, যাতে তার সব ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হয় এবং দুনিয়া-আখিরাতের শান্তি লাভ করতে পারে।