রমাদানুল মোবারক এর গুরুত্ব ও ফজিলত

 

ইসলামিক স্কলারঃ
মাওলানা মুফতি এম ফাহাদ হোসাইন
ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক,
দৈনিক জনতার মতামত

হযরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবারশা বান মাসের শেষদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নসিহত প্রদানকালে এক পর্যায়ে বলেন, ‘এটি এমন এক মাস যাব প্রথম অংশ রহমতের, মধ্যবর্তী অংশ মাগফিরাত তথা ক্ষমার, আর শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে নাজাতের।

হাদিসবিশারদগণের মতানুসারে রমাদানুল মুবারকের পূর্ণ মাসই রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভের মাস। এমন নয় যে, এর প্রথম দশ দিনে কেবল রহমতই মিলবে, মাগফিরাত ও নাজাত মিলবে না। দ্বিতীয় দশ দিনে মাগফিরাত মিলবে, রহমত ও নাজাত পাওয়া যাবে না। আর শেষ দশ দিনে কেবল নাজাতই মিলবে, রহমত ও মাগফিরাত পাওয়া যাবে না।

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত-এগুলো একটি অপরটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং একই সূত্রে গাঁথা। একটি ছাড়া অপরটি কল্পনা করা যায় না। মাগফিরাত ও নাজাত তো আল্লাহর রহমতেরই বহিঃপ্রকাশ। আর রহমত ছাড়া কি মাগফিরাত ও নাজাত কল্পনা করা যায়?!

অতএব রমযানের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত প্রার্থনা করা কাম্য। কেননা রমাদানুল মুবারকের প্রতিটি মুহূর্তই রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভের মাহফিল।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমযান মাস আরম্ভ হলে রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০৭৯)

অন্যত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমযানের প্রতিরাতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে বহু বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
(জামে তিরমিযি, হাদিস: ৬৮২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৪২)

মুসনাদ আহমদ ইবনে হামবলে সহিহ সনদে রমযানের দিনের কথাও বর্ণিত হয়েছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমযানের প্রত্যেক দিনে ও রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে বহু বান্দাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তাদের প্রত্যেকের দুআ কবুল করা হয়।
(মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৭৪৫০)

অতএব, রমযান মাসকে প্রচলিত পন্থায় তথা রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত-এই তিনভাগে ভাগ করে সেগুলো সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা-পোষণের যে প্রচলন আমাদের মাঝে রয়েছে, তা বিশুদ্ধ ধারণার পরিপন্থি। উপরে বর্ণিত সহিহ হাদিসসমূহের ভাষ্য এই ধারণাকে সমর্থন করে না।

হযরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদিসটি’ মুহাদ্দিসিনের। দৃষ্টিতে যয়িফ হলেও কোনো কোনো আকাবির-আসলাফ তার ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, পুরো রমযান মাসই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। তবে এর প্রথমভাগে রহমত নাযিলের প্রাবল্য থাকে। আর তা ওইসমস্ত বান্দাই অর্জন করেন, যারা শুরু থেকেই নেককার ও মুত্তাকি বান্দা। মধ্যভাগে ক্ষমাবর্ষণের প্রাবল্য থাকে। যে-সমস্ত রোযাদার সাধারণ গুনাহগার, তাদের এই সময়ে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর শেষভাগে জাহান্নাম থেকে নাজাত-দানের প্রাবল্য থাকে। ফলে বড় বড় গুনাহগার, যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছিল, তাওবা-ইসতিগফারের ফলে তাদেরও নাজাত দেওয়া হয়। ফলে এখন তাদের কর্তব্য হলো, নতুন সংকল্প নিয়ে আল্লাহমুখী জীবন গড়ার ব্যাপারে ফিকিরমান হওয়া।