কবরে কারো জন্য কিছুই করার নেই, রবের হুকুমের দাস কবর।

 

মোহাম্মদ মাহামুদুল হাসান কালাম 

কবরের কারো জন্য কিছুই করার নেই।কারন ,কবর কেবল রবের হুকুমের দাস।আর রবের আদেশে নাফরমান বান্দাদের উপর নেমে আসবে ভয়াবহ আযাব।যার শুরুটা হবে কবর থেকেই।

আল্লাহর হুকুম পাওয়া মাত্র কবর এমন ভাবে সংকীর্ণ হবে যে,কবর বাসীর এক পাজরের হাড় অপড় পাজড়ে গিয়ে ঠেকবে।এ এমন এক চাপ!!যার বেদনায় আমাদের সকলকে দুনিয়ার সুন্দরতম আলিংগনের মুহূর্তগুলোকেও ভূলিয়ে দিতে বাধ্য।

আল্লাহর জমিনে থেকে,আল্লাহর দেওয়া রিজিক খেয়ে,আল্লাহর সকল নেয়ামত ভোগ করে অথচ তারই অবাধ্যতা করি সারাজীবন।তওবা করারও প্রয়োজন মনে করিনা।আহারে!! – কবর তখন বলবে ,কোথায় তোমাদের অহংকার??

বাকি শাস্তিগুলোরও নীরব প্রত্যক্ষদর্শী কবর।একে একে মাইয়্যেতের পরিয়ে দেয়া হবে জাহান্নামের পোশাক ও বিছিয়ে দেয়া হবে জাহান্নামের বিছানা।তারপর জাহান্নামের দিক থেকে খুলে দেওয়া হবে দরজা।সবশেষে দুই ফেরেশতার পক্ষ থেকে এমন এক হাতুড়ি
দ্বারা অনবরত আঘাত করা হবে,যেই হাতুড়ির এক আঘাতে বিশাল পাথরের পাহাড়ও চূর্ণ বিচূর্ণ করে ধুলায় পরিণত করতে পারে।

এভাবেমুহূর্তেই মাইয়্যেতের জীবনটা হয়ে উঠবে এক পশলা জাহান্নাম।আর পূনরায় জেগে উঠার আগ মুহূর্ত বা কেয়ামতের দিনতক পাপচারীরা কবরে শুয়ে বহুমুখী শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।

কবরের আযাব ভোগকারীদের চিৎকার মানুষ এবং জীন একদমই শুনতে পায়না ।যদি শুনতে পেতাম তাহলে আমরা হ্য়ত এতটা অপ্রস্তুত হয়ে কবরে যেতাম না ।
এবার আমরা দেখি কবরে সফলদের অবস্থা

এতসব কিছুর মাঝেও কিছু কিছু মানুষ যথেষ্ট ঈমান ও আমল নিয়ে কবরে যাবে।এদের প্রশান্ত ও নূরানী চেহারা দেখেই মনে হবে এরা ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পারবে।সুন্দরভাবে উত্তর দেয়ার পরে ওই দুই ফেরশতা সফলতার নেপথ্য কারন জানতে চাইবে।জবাব শুনে চিন্তা ছাড়াই বলে দেয়া যায়,এরা আখিরাতের সিলেবাস দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় বেশ ভাল ভাবেই সম্পূর্ণ করেছে।মহান আল্লাহপাক এমন ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করবেন।

যথারীতি তাদের পুরস্কারের শুরুও কবর থেকেই হবে।এরকম সম্মানী বান্দাদের থাকার জন্য কবরকে বহুদুর পর্যন্ত বিসতৃত হওয়ার আদেশ দেওয়া হবে এবং কবর তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।এর পর অন্ধকার কবর আল্লাহর আদেশে আলোকিত হয়ে উঠবে।আলোকিত বান্দা,আলোকিত কবর।সত্যিই আল্লাহর বিচার সর্বোৎকৃষ্ট ।

এর পর বান্দাকে জান্নাতের পোশাকে সাজিয়ে তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হবে আর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে।মোটকথা ,জান্নাত না হলেও কবরে জান্নাতের আগে এক পশলা জান্নাতের অনুভূতি বললে খুব একটা ভূল হবেনা। এভাবে শেষ বিচারের আগ দিবস পর্যন্ত কবরের বুকে শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকবে আল্লাহর নেককার বান্দাগন।আর এই নেককার বান্দাদের পেলে কবরও খুশি হয়।

তাই আমরা এখনও জীবিত আছি,এই দুনিয়ায় বিচরন করছি,সবারই স্মরণ রাখা উচিত – আজ নয়ত কাল আমাদের কবরে যেতেই হবে।এই দুই শ্রেণীর বান্দার ঈমান বিশ্লেষণ করে আমরা যা বুঝতে পারি,কবরের এই জীবনটাকে এক টুকরা জান্নাতের বাগানে পরিণত করতে আমাদের কিছউ করণীয় কাজ রয়েছে।আমরা যদি একটু চেষ্টা করি তাহলে আমরা সকলেই কামিয়াব হব বলেই বিশ্বাস।আল্লাহ আমাদের সকলকে কামিয়াব হবার তওফিক দান করুন।ক্ষণস্থায়ী মানব জীবন শেষে আখিরাতের পথে আমাদের প্রথম মনজিল বা গন্তব্য হল কবর।

আমরা অধিকাংশ মানুষই জীবনভর কবরের কথা একদমই স্মরন করিনা।কবরের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে আমরা সবাই ব্যাপকভাবে উদাসীন।

কিন্তু কবর যে এক চিরন্তন সত্য।কিংবা বলা যায় এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা। প্রত্যেকে মানুষ কেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।আর মৃত্যুর পর প্রত্যেককে কবরে যেতে হবে ।আজ নয়ত কাল,আমাদের সবাইকে কবরের সাথে মোলাকাত করতে হবে ।তাকে এড়ানোর সাধ্য আমাদের কারোরই নেই।

এই দুনিয়াতে ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্যএকটা ঘর সাজাতে মানুষ কত রকমের ,কত বিরাট আয়োজন করে।সারাজীবনের টাকা-পয়সা, সম্পদ, মেধা সবকিছু খরছ করে ঘর বানায়।অথচ কয়দিনই বা সেই ঘরে থাকতে পারে?অথচ চিরস্থায়ী ঘর কবর সাজানোর ব্যাপারে আমরা ততটাই উদাসীন যতটা এ দুনিয়ার ঘর সাজাতে উদগ্রীব।

শেষমেষ ত কবরের ভেতরেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।আর শত শত গরীবের (আমলের )কান্নায় ভারী হয়ে উঠবে কবরের বুক।

তারপরেও আমরা কেন কবরের জীবন নিয়ে চিন্তা করিনা বা সাবধান হইনা ? মৃত্যুর পর থেকে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত আমাদের কত দীর্ঘ সময় এই অন্ধকার ঘর কবরে থাকতে হবে।অথচ এই ঘরটাকেই আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে নোংরা ,বিদঘুটে ও বিপদসংকুল করে তৈরী করছি।অথচ একটু সচেতন হলেই আমরা কবরকে শান্তির নিবাস হিসাবে গড়ে তুলতে পারি।কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা বড়ই উদাসীন