
মোঃ শাহজাহান বাশার ,স্টাফ রিপোর্টার এএনবিটোয়েন্টিফোরডটনেট
কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতা সামসু উদ্দিন আহমেদ রিয়াদ এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এজিএস ও নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রিয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে সহিংসতার অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন পদ-পদবি বাগিয়ে নেওয়া, ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশ্বস্ত সূত্র মতে, রিয়াদ তার মালিকানাধীন এ.জে.আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আন্দোলন দমনসহ সরকার পতনের চক্রান্তে অর্থ সরবরাহ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের অর্থ দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দমন করতে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব ভূমিকা ,ঢাকার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী দমনে সম্পৃক্ত থাকা এবং জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানে বিরোধিতা করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত রিয়াদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ২০ নভেম্বর, বাড্ডা থানায় দায়ের করা এক হত্যা চেষ্টা মামলায় রিয়াদ ৪৩ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তবে, অন্যান্য অভিযুক্তরা আত্মগোপনে থাকলেও রিয়াদ প্রকাশ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভুক্তভোগী দূর্জয় আহমেদ বলেন, “শত শত শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে রিয়াদ এখনো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তার ব্যবসা-বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য হতাশাজনক।”
ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি ও কর ফাঁকি ,রিয়াদ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে কয়েকশ কোটি টাকার ঋণ উত্তোলন করলেও তা পরিশোধ করেননি। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ.জে.আর কুরিয়ার সার্ভিসের নামে তিনি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
একাধিকবার ভ্যাট ফাঁকির অপরাধে জরিমানার সম্মুখীন হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রিয়াদ এখনো শাস্তির আওতায় আসেননি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তিনি পরিবারসহ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ডিএমপি’র প্রতিক্রিয়া , বিষয়ে কাফরুল থানায় মানবিক অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ফারুকুল আলম বলেন,আমরা রিয়াদের ব্যাপারে কিছু তথ্য পেয়েছি এবং খুব শিগগিরই তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছাত্র আন্দোলনকারীদের দাবি ,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাতুল ইসলাম বলেন, “যারা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনে কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা ও ছাত্র আন্দোলন দমনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হোক।”
ছাত্র প্রতিনিধি আল আমিন বলেন, “আমরা চাই, আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং জনগণকে আহ্বান জানাই, যেন তারা এ ধরনের ঘাপটি মেরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।”
রিয়াদের অবস্থান বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রিয়াদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়াদের মালিকানাধীন এ.জে.আর কুরিয়ার সার্ভিসের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দমন করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রিয়াদের মতো ব্যক্তিদের অব্যাহত প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, যেন দ্রুত এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।