রাজধানীর চকবাজার এলাকায় চাঞ্চল্যকর প্লাস্টিক ব্যবসায়ী হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

রাজধানীর চকবাজারের পোস্তা এলাকায় চাঞ্চল্যকর প্লাস্টিক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম (৪৬) হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চকবাজার মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতের নাম সাবিনা আক্তার (২৫)। এ সময় তার হেফাজত থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

 

চকবাজার মডেল থানা সূ‌ত্রে জানা যায়, গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি.) রাতে রাজধানীর চকবাজারের পোস্তা এলাকার ৬৬/১, আরএনডি রোডের এশিয়া টাওয়ারে ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে হাত, পা ও মুখ বাঁধা এবং পুরুষাঙ্গ কাটা অবস্থায় নজরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে চকবাজার মডেল থানা পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ আলামত ফুলদানির ভাঙ্গা অংশ, ধারালো চাকু ও অন্যান্য আলামত জব্দ করে। এরপর ভিকটিম নজরুল ইসলামের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তহিদুল ইসলাম ওরফে তাপস বাদী হয়ে চকবাজার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

রুজুকৃত মামলাটি তদন্তকালে আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ ও সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হিসেবে সাবিনা আক্তারকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল শনিবার (৭ ডিসেম্বর, ২০২৪) ভোর সাড়ে ৫টায় যশোরের বাঘারপাড়া থানার মির্জাপুর মধ্যপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।এ সময় তার হেফাজত থেকে ভিকটিম নজরুল ইসলামের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

 

থানা সূত্র আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত সাবিনা আক্তার ,প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্লাস্টিক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাবিনা আক্তার বলেন, ঘটনার প্রায় এক মাস আগে এক ব্যক্তি চাকুরির জন্য ভিকটিম নজরুল ইসলামের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তারা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্ত্রী সন্তান বাসায় না থাকায় ভিকটিম নজরুল ইসলাম সাবিনা আক্তারকে গত ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ রাতে বাসায় ডেকে নেন। সাবিনা আক্তার নজরুল ইসলামের বাসায় রাতে অবস্থান করেন। এসময়ে চাকুরি ও বিয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।

 

একপর্যায়ে সাবিনা আক্তার প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ভোর ৫টার দিকে নজরুল ইসলামের মাথায় ও মুখে পাথর দিয়ে আঘাত করে এবং মুখে বালিশ চাপা দেয়। ফলে নজরুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে অলস হয়ে পড়েন।এরপর নজরুল ইসলামের হাত, পা ও মুখ বেঁধে ধারালো চাকু দিয়ে নজরুলের পুরুষাঙ্গ কেটে আলাদা করে নির্মমভাবে হত্যা করে। গ্রেফতারকৃত সাবিনা আক্তারের দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা পাথর ও ঘটনার দিন তার পরা বোরকা উদ্ধার করেছে। গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে চকবাজার মডেল থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এই ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও চাঞ্চল্যকর। এটি প্রমাণ করে যে, ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে সৃষ্ট বিবাদও কখনো কখনো সহিংস রূপ নিতে পারে। হত্যাকাণ্ডের এই নৃশংস উপস্থাপন সমাজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা মানসিক অস্থিরতা এবং সম্পর্কের জটিলতার বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসে।

গ্রেফতার হওয়া সাবিনা আক্তারের স্বীকারোক্তি ও আলামতের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত না হলেও তা ক্ষিপ্ত অবস্থায় সংঘটিত হয়েছে। চাকরি ও বিয়ের বিষয়টি নিয়ে বিরোধ এ ধরনের ঘটনায় রূপ নিতে পারে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

পুলিশের প্রযুক্তি এবং সিসিটিভি ফুটেজ ব্যবহার করে অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারের কাজটি প্রশংসনীয়। এটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতার পরিচায়ক। তবে এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা জরুরি।

আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার হওয়া উচিত, যাতে এটি ভবিষ্যতে অন্যদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে।