
ইতোমধ্যে সরকার কোটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মনে নিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে খুশি। তাদের মধ্যে নারী কোটাসহ বিভিন্ন কোটা নিয়ে কিছু অস্বস্তি রয়েছে। তবে বেশির ভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেটি চেয়েছিলেন যে অধিকাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে এবং কোটায় ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি নয়, সেটি অর্জিত হয়েছে। আর এ কারণেই শিক্ষার্থীরা এখন এ নিয়ে আন্দোলন করতে আগ্রহী নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা শুধুমাত্র কোটার বৈষম্যের কারণে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিল তারা এখন আর আন্দোলন করতে চায় না। তারা এখন শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যেতে চায় এবং সামনের দিনগুলোতে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে চায়।
কিন্তু এই আন্দোলনের ভেতরে থাকা কিছু জামায়াত-শিবির এবং ছাত্রদলের ক্যাডাররা আন্দোলন অব্যাহত রাখার পক্ষপাতি। বিশেষ করে দুজন সমন্বয়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যারা সরাসরি ছাত্রশিবির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এদের মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদের কথা বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। নাহিদ ইসলামের সাথে শিবিরের যোগাযোগ রয়েছে বলেও বিভিন্ন সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে। আর এ কারণেই তারা এখন নানা রকম দাবি দাওয়া উপস্থাপন করে আন্দোলনকে দীর্ঘায়ু করছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন যে, তাদের মূল দাবি অর্জিত হয়েছে। এখন তারা এসব আন্দোলনে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে রাজি নন।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপের পররাষ্ট্র সচিব এরসাথে হাইকমিশনারের বৈঠক
কোটা বৈষম্যের দাবি মেনে নেওয়ার পর আন্দোলনকে দীর্ঘায়ু করার জন্য ছাত্রশিবিরের ফর্মুলায় নতুন নতুন দাবি দাওয়া উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রথমে আট দফা দাবি দেওয়া হয়েছে এবং এই আট দফা দাবি বিভিন্ন ভাবে পূরণ করা হয়েছে। আট দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল যে সমস্ত হত্যাকাণ্ড গুলো হয়েছে তার তদন্ত ইতোমধ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছে যে, দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেওয়া হবে।
তৃতীয়ত, ইন্টারনেট পরিসেবা চালু করতে হবে। গতরাত থেকে ইন্টারনেট পরিসেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যয় ভার সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। এরপর এ নিয়ে আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয় বলেই সাধারণ মানুষ মনে করছেন। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই মনে করেন যে, এটি তাদের আন্দোলনের একটি বড় বিজয়। আর এ কারণেই এখন তারা আর আন্দোলনে আগ্রহী নয়। যারা সমন্বয়ক আছে তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আন্দোলনকে গুটিয়ে ফেলার পক্ষপাতি। আর এ কারণেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতাদের মধ্যে এখন প্রকাশ্য বিরোধ দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। ইতোমধ্যে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম সহ কয়েকজন সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও সারজিস আলম এই বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থা এবং বাস্তবতা বিবেচনা করেই তিনি সরকারের কাছে আট দফা দাবি পেশ করেছিলেন এবং সেই আট দফা সরকার মেনে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: আন্দোলনে আমরা বর্বরতা দেখেছি,অপরাধীদের চিহ্নিত করবো
এখন আবার নতুন করে চার দফা দাবি উপস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ যে কোনও কৌশলে আন্দোলনকে জিইয়ে রাখার একটি কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকায় যে পাঁচ লক্ষাধিক ছাত্রশিবির এবং বিএনপি-জামায়াত ক্যাডার প্রবেশ করেছিল তাদের অনেকে এখনও ঢাকায় অবস্থান করছে। কোন ভাবে একটি ইস্যু তৈরি করে তাদের আবার সংগঠিত করার চেষ্টায় আছে কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতাদের কয়েকজন। এ কারণেই এখন তাদের আন্দোলনের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন আন্দোলনের ব্যাপারে মোটেও আগ্রহী নন।
বাংলা ইনসাইডার