হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা কিশোর সজিব

, বুড়িচং, কুমিল্লা প্রতিনিধি।।

হাওয়াই মিঠাই লাগবে? হাওয়াই মিঠাই… মিষ্টি নরম গোলাপি, সাদা হাওয়াই মিঠাই… ।  কাঠির মাথায় পলিব্যাগে মোড়ানো গোলাপি-সাদা হাওয়াই মিঠাই। ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়ায় ফেরিওয়ালা। চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘুরানো জাঁতায় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় হাওয়াই মিঠাই। কী শহর, কী গ্রাম- মেলা বসলেই দেখা মেলে হাওয়াই মিঠাইয়ের। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালাদেরও চোখে পড়ে। তারা নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে রঙিন হাওয়াই মিঠাই।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার লড়িবাগ গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি জানান, তার কৈশোর বয়সের হাওয়াই মিঠাইয়ের স্বাদের কথা , তিনি আজও ভুলতে পারেননি। এখনো গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা এলে তিনি তা কিনে শিশুদের সাথে  মজা করে খান। তিনি বলেন, “যখন দাদা, বাবা কিংবা কাকাদের সঙ্গে গ্রামগঞ্জের হাটবাজার বা মেলায় যেতাম, তখন প্রথম বায়না ছিল এই হাওয়াই মিঠাই খাওয়া।’ একই গ্রামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘হাওয়াই মিঠাইয়ে পেট না ভরলেও মুখের স্বাদ মিটে। দামে সস্তা হওয়ায় আমরা ছোটবেলায় প্রচুর খেতাম । এখন আর খাওয়া হয় না। তবে আমি খাইনা বলে যে কিনি না, তা কিন্তু নয়; এখনো মাঝে মধ্যে হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালা এলে দুই নাতির জন্য কিনি। এখন ওরা খুব মজা করেই খায়।

শ্রীমন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘ফেরিওয়ালা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে আসলে আমি ছুটে যাই। বাবা কিংবা মাকে টাকা দিতে বলি। একেকটা হাওয়াই মিঠাই মাত্র ১০ টাকা । আমি এক সঙ্গে ২ টা  কিনে একটা আমি খাই, আরেকটা আমার ছোট বোনকে দেই। তবে মাঝে মধ্যে খুব বেশি মজা লাগলে আমি দুটাই খেয়ে ফেলি ।

ঐ শিশুর বাবা বলেন, ‘আমিও আমার বাবার কাছে একই জিনিস খেতে আবদার করতাম এবং বাবা সেটা কিনে দিতেন। এখন আমি আমার সন্তানদের আবদার রক্ষা করি।’

বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করা ফেরিওয়ালা সজিব জানান, তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার  চন্ডিদোয়ার গ্রামে। বর্তমানে সে কুমিল্লার বুড়িচং এলাকায়  অন্য আরো দুই ফেরিওলার সঙ্গে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সজিব আরো জানান, একজন মালিকের দায়িত্বে তারা কাজ করেন। মালিক থাকা- খাওয়ার খরচ বহন করেন। সকাল ৭টায় বের হয়ে ফেরেন সন্ধ্যায় । প্রতিদিন  ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন । প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২’শ  টাকা বিক্রি করলেও পান মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এই টাকা বাড়িতে পাঠান বাবা-মা, ভাই-বোনের জন্য। এক সময় বাবা কাজ করতেন। এখন তার বয়স হয়েছে বলে জীবন-জীবিকার তাগিদে পরিবারের হাল ধরতে কম বয়সে কাজ শুরু করেছেন তিনি। বর্ণিল হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে  সজিব অভাব অনটনের কারণে তার পরিবারের পাশে  দাঁড়িয়েছে ঠিকই । কিশোর সজিবের বয়স ১৬/১৭  হবে। এই বয়সে তার হাতে থাকার কথা বই, কলম,খাতা কিংবা সহপাঠীদের নিয়ে খেলা- ধুলায়। আমরা চাই না কৈশোর সজিবের মত অন্য কোন সজিবের এভাবে বিবর্ণ জীবন। সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে বিত্ত বৈভবের মালিক ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিদে। তাহলেই কম বয়সে লেখাপড়া না চালিয়ে সজিবের মত কিশোর ছেলেরা ফেরিওয়ালা হবে না। সমাজের অন্য  দশটা সন্তানের মত লেখাপড়া করে বড় হবে।

এএনবি২৪ ডট নেট/জজ