সাগরের মধ্যে সাজানো গোছানো দেশ মালদ্বীপে বেতনের কষ্টে অসংখ্য বাংলাদেশী

কিশোরগঞ্জের নিজাম উদ্দিন দালালের মাধ্যমে লাখ টাকা খরচ করে পাড়ি জমিয়েছিলেন অপরূপ দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে। ওই সময় তার বেতন ছিল ১০০ ইউএস ডলার। চাকরি শুরুর পর কেটে গেছে ২০ বছর। এখন তার বেতন বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৩০০ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩২ হাজার টাকা। সময়ের ব্যবধানে নিজাম উদ্দিনের বেতন খুব একটা বাড়েনি। তারপরও ওই বেতনও ঠিকভাবে কোম্পানির মালিক পরিশোধ করছেন না বলে প্রবাসীদের অভিযোগ।

 

শুধু নিজাম উদ্দিন নন, মালদ্বীপের রাজধানী মালে, হুলহুমালে ছাড়াও বিভিন্ন দ্বীপে ছড়িয়ে থাকা এমন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করলেও সেই অনুযায়ী তারা বেতন না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে প্রতিনিয়ত জীবন নির্বাহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভও।

তারা বলছেন, কোম্পানি মালিককে বেতন বাড়ানোর কথা বারবার বলার পরও তারা মোটেও তা আমলে নিচ্ছে না। উল্টো অনিয়মিত হওয়ার কারণে কোনো কোনো মাসে পুরো বেতনও দিতে তারা গড়িমসি করছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে শ্রমিকদের আকুতি, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটানা কষ্ট করার পরও যদি মালিক পক্ষ নায্য বেতন না দেয়, তাহলে তারা তাদের কষ্টের কথা আর কার কাছে গিয়ে বলবেন? মালদ্বীপের শ্রমনীতি অনুযায়ী যাতে কর্মীদের বেতনভাতা কোম্পানি থেকে পরিশোধ করা হয়, সে ব্যাপারে মালদ্বীপ সরকারের সাথে আলোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।

 

সাগরের মধ্যে সাজানো গোছানো দেশটির শপিংমল, বিমানবন্দর, সি বোর্ড ও রিসোর্টে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে আলাপ করতে গেলে তারা   ঠিকভাবে বেতনভাতা না পাওয়ার কষ্টের কথা তুলে ধরেন। তবে যেসব শ্রমিক বৈধভাবে দেশটিতে এখন কর্মরত আছেন তারা কোম্পানি থেকে ঠিকমতো বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।  মোটকথা তারা ভালোই আছেন।

 গত রোববার স্থানীয় সময় দুপুরে দেশের উদ্দেশে ফ্লাইটে ওঠার আগে সাগর ঘেঁষা মালদ্বীপ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে কথা হয় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিনসহ ৬-৭ জন প্রবাসীর সাথে। তাদের কাছে মালদ্বীপের শ্রমবাজারের অবস্থা জানতে চাইলে তারা বলেন, সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি খুলে গেলে অনেক ভালো হতো। এখান থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠানোর সুযোগ ছিল।

 

২০১৯ সাল থেকে শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। গতবছর ডিসেম্বর মাসে শ্রমবাজার খুলে দেওয়ার তিন মাস পরই আবার বন্ধ করে দেয় মালদ্বীপ সরকার। কিন্তু দুষ্টচক্র এই সুযোগে সিন্ডিকেট করে (মালদিভিয়ান-বাংলাদেশী দালাল ও কোম্পানি প্রতিনিধি) বাংলাদেশ থেকে ভিজিট ও ট্যুরিস্ট ভিসার নামে লোক আনছে। তারা বলেন, যেখানে বৈধভাবে একজন শ্রমিক আসতে খরচ হবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা। 

সেখানে নেয়া হচ্ছে ৪-৫ লাখ টাকা। আর ভালো রিসোর্টে কাজ পেতে হলে ১০ লাখ টাকার মতো লাগে। দুই সরকারের মধ্যে সমঝোতায় যদি শ্রমবাজার খোলা সম্ভব হয়, তাহলে এ দেশে কর্মী আসতে ২-৩ লাখ টাকার বেশি লাগবে না বলে তারা মনে করেন। বাজার না খোলার পেছনে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরও ব্যর্থতা রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকার কারণে মালদ্বীপে বসবাসরত বেশির ভাগ বাংলাদেশী হুন্ডিসহ নানা মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। এভাবে টাকা পাঠাতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশী অপরাধে জড়িয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। অনেকে আবার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন।

 

হুলহুমালে বাস স্টপেজে কথা হয় কুমিল্লার ইউনুছ, চাঁদপুরের সাত্তার, ফেনীর জয়নাল এবং কেরানীগঞ্জের সাইদুল ইসলামের সাথে। তারা এ প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে বলেন, আমরা কেউ ৮ বছর ধরে, আবার কেউ ৩-৫ বছর ধরে এ দেশটিতে আছি। ইউনুস বলেন, আমি ৮ বছর ধরে থাকলেও এখনো অবৈধভাবে আছি। অনেক চেষ্টা করেও বৈধ হতে পারিনি। এখন যেখানে কাজ করছি তারা পরিশ্রম করাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অবৈধ হওয়ার কারণে বেতনভাতা দিতে গড়িমসি করছে। আমার মতো হাজার হাজার শ্রমিক একই সমস্যায় রয়েছে মালদ্বীপে। অপর কর্মী সাত্তার বলেন, আমি বৈধভাবেই এখানে আছি ৩ বছর ধরে। তবে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে আমাদের বেশি হয়রানি হতে হচ্ছে। নির্ধারিত ফির বেশি টাকা না দিলেই মাসের পর মাস পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়। এ সমস্যা ওই সমস্যা বলে ঘোরাতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন তারা। অবশ্য যারা দালালদের মাধ্যমে কন্ট্রাক্টে পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিচ্ছে তাদেরটা দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। মূলত হাইকমিশনে এখন দালাল সিন্ডিকেট ছাড়া কোনো কাজই হয় না বলে তাদের অভিযোগ।

অবৈধ বাংলাদেশীর সংখ্যা কত হতে পারে জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, কিছুদিন আগে মালদ্বীপের পত্রিকায় খবর এসেছে, বৈধ অবৈধ মিলিয়ে এক লাখের মতো বাংলাদেশী আছেন। এর মধ্যে ৪০ হাজারই অবৈধ। অবৈধদের আগে ধরপাকড় করলেও এখন পুলিশ ডিস্টার্ব করে না। তবে অবৈধদের মধ্যে বেশির ভাগ বাংলাদেশী মালদিভিয়ানদের সাথে যৌথভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে হত্যা, ছিনতাই, মাদক, মানবপাচার ও হুন্ডিসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে দেশটির কারাগারে তিন হাজারের মতো বাংলাদেশী আটক আছে বলে আমরা শুনছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে ইউনুস বলেন, বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর সুযোগ না থাকার কারণে বেশির ভাগ প্রবাসী মোবাইল ব্যাংকিং নতুবা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। এতে সরকার যেমন রেমিট্যান্স হারাচ্ছে তেমনি আমাদেরও টাকা পাঠাতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।

একটি শপিংমলে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশী জলিল সরকার বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে বৈধভাবে এখানে কাজ করছি। কিন্তু বেতন আগেও ছিল আড়াই শ’ ডলার, এখনো সেই বেতনেই কাজ করছি। হাইকমিশনকে বলেন, আমাদের জন্য কিছু একটা করতে। তবে সাংবাদিকদের বহনকারী সি-বোটে কর্মরত টাঙ্গাইলের আনোয়ার হোসেন বলেন, তিন বছর আগে এক বছরের চুক্তিতে এসেছিলাম। দালাল সেটা বলেনি। এখানে আসার পর জানলাম। এরপরই আমি অবৈধ হয়ে যাই। বিষয়টি আমার মালিককে জানালে তিনি বলেন, সমস্যা নাই। পরে মালিকের কথামতো কাগজপত্র ঠিকঠাক করে জমা দিয়েছি। মাসে কত টাকা উপার্জন করছেন- জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, ৩০-৩৫ হাজার টাকা মাসে উপার্জন করছি। এরপুরোটাই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখানে আমি ভালো আছি।

 শ্রমবাজার সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বর্তমানে এক লাখ শ্রমিক রয়েছে মালদ্বীপে। এর মধ্যে ৫০ হাজারই অনিয়মিত। অর্থাৎ বৈধ ভিসা ছাড়া বসবাস করছেন তারা। এটা সত্যি যে অনিয়মিতদের প্রতিদিনই নানাভাবে ঠকানো হচ্ছে। আমরা নিয়মিত এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার বলছে, বেতন বা সুযোগ সুবিধার প্রশ্ন পরে, আপনারা যার অভিযোগের কথা বলছেন, সেই নামে আমার এখানে কোনো কর্মী কাজ করে না। তিনি বলেন, অনিয়মিতদের বৈধতা দেয়ার বিষয়ে আমরা মালদ্বীপ সরকারের সাথে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি।

 

। বর্তমানে দেশটির কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত ৭০ জন এবং মাদকের মামলায় ৩০ জনসহ মোট ১০০ জন বাংলাদেশী আটক রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

 

 

প্রকাশকঃএম এইচ, কে , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net