ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর মালদ্বীপের হ্যান্ডবল বদলে দেওয়া বাংলাদেশি আমজাদ

 

মালদ্বীপে হ্যান্ডবল খুব জনপ্রিয় না হলেও বাংলাদেশি কোচ আমজাদ যেন খেলাটির চেয়েও বেশি জনপ্রিয়।

২০১৫-১৯ পর্যন্ত মালদ্বীপের হ্যান্ডবলে প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন আমজাদ। পদবি প্রধান কোচ হলেও মালদ্বীপের হ্যান্ডবলের সব কিছুই তার হাত ধরে শুরু। খেলোয়াড় তৈরি করা, কোচদের ট্রেনিং দেওয়া, রেফারি প্রশিক্ষণ এর পাশাপাশি আবার আন্তর্জাতিক যোগাযোগেও অবদান অনেক।

ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে চার বছরের চুক্তিতে আবারও আজ শুক্রবার ( ৬ অক্টোবর)   মালদ্বীপ এসেছেন  লাল সবুজ দলের  ৪৫ বছর বয়সী সাবেক খেলোয়াড়। আমজাদ হোসেন। 

এই বাংলাদেশি খেলোয়াড় কে মালদ্বীপের ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, মালদ্বীপের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী দিদারুল আলম ভূইয়া, মালদ্বীপ সাংবাদিক ইউনিটির সিনিয়র সহ সভাপতি মাহামুদুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাদের সহ স্থানীয় মালদ্বীভিয়ান নাগরিকগন।

আমজাদ এবার বিশেষ করে তৃণমূলে কাজ করবেন । এর জন্য মাসিক আড়াই হাজার ডলার বেতন ছাড়াও খাবার, আবাসিক সুবিধা ও বছরে দেশে ফেরার তিনটি টিকিট পাবেন।

নতুন করে মালদ্বীপে দায়িত্ব পেয়ে আমজাদ উচ্ছ্বসিত।তিনি   বলেছেন, ‘নতুন দায়িত্ব পেয়ে ভালো লাগছে। আগে মালদ্বীপে জাতীয় দল নিয়ে কাজ করেছি। এবার বয়সভিত্তিক দল নিয়ে কাজ করবো। উদীয়মানদের শেখানোর সুযোগ পেয়ে আমি আসলেই খুশি। 

মালদ্বীপ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সভাপতি আহমেদ ইসমাইল এক কথায় বললেন, ‘আমরা আগে হ্যান্ডবল কার্যক্রম শুরু করলেও পেশাদার, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছিল না। আমজাদ আসার পরই আমরা একটি সুন্দর কাঠামো পাই। মালদ্বীপের হ্যান্ডবল আজ যে অবস্থায় এসেছে, এর প্রায় পুরো অবদানটাই আমজাদের। তিনি না আসলে আমরা এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না।’তিনি খেলোয়াড়দের কোচ তো বটেই, কোচদেরও কোচ। আমরাও তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আমজাদ ভাইকে মালদ্বীপ হ্যান্ডবলের পিতা বললেও কেউ বলবে না বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।’তার হাত ধরেই মূলত আমাদের সব কিছু শেখা ও জানা। তিনি খেলোয়াড়দের কোচ তো বটেই, কোচদেরও কোচ। আমরাও তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আমজাদ ভাইকে মালদ্বীপ হ্যান্ডবলের পিতা বললেও কেউ বলবে না বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।

মালদ্বীপের শীর্ষ ফুটবল কোচ মোহাম্মদ নিজামের স্ত্রী একাধারে হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন। হ্যান্ডবল কোচ আমজাদের প্রশংসা করলেন নিজামও, ‘আমার স্ত্রী তার অধীনে খেলেছে। সে কোচ হিসেবে দারুণ। শুধু হ্যান্ডবল নয়, মালদ্বীপের অন্য খেলার ব্যক্তিদের সঙ্গেও তার দারুণ পরিচয়।’

মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা বলেন আমজাদকে নিয়ে খুব গর্বিত, ‘মালেতে আমাদের গর্ব করার মতো বিষয় খুব কমই রয়েছে। আমজাদ ভাই আমাদের গর্বের জায়গা বলা যায়। তাকে মালদ্বীপের লোকজন খুবই সম্মান করে। তার জন্য আমরা অনেক জায়গায় বাড়তি সম্মান পাই।’

আমজাদের আগে এক ভারতীয় কোচ এনেছিল মালদ্বীপ হ্যান্ডবল। তিনি খুব আশাব্যাঞ্জক কিছু করতে পারেননি। মালদ্বীপ হ্যান্ডবলের কর্তারা ভালো একজন কোচ খুঁজছিল। ২০১৫ সালে কাতারে কোচেস সিম্পোজিয়ামে গিয়ে আমজাদকে পেয়ে যান মালদ্বীপের কর্তারা। মালদ্বীপ ফেডারেশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আহমেদ মুজতবা (এখন সহ-সভাপতি) বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূরের সঙ্গে আলোচনা করে মালদ্বীপ নারী দলকে বাংলাদেশে পাঠান প্রশিক্ষণের জন্য।

আমজাদের অনুশীলনে সন্তুষ্ট হয়ে মালদ্বীপ হ্যান্ডবল ফেডারেশন তাকে নিজেদের প্রধান কোচ করে নিয়ে আসে। এরপর মালদ্বীপের হ্যান্ডবল হয় আমজাদময়।

বিভিন্ন খেলায় উন্নয়নের জন্য যেখানে বাংলাদেশে বিদেশি কোচ, উপদেষ্টা আনা হয় কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে। সেখানে আমজাদ ব্যতিক্রম উদাহরণ। ২০১৬ শিলং-গৌহাটি এসএ গেমস ও ২০১৯ কাঠমান্ডু-পোখরা এসএ গেমস দুই বারই আমজাদ মালদ্বীপ হ্যান্ডবল দলের প্রধান কোচ ছিলেন। শুধু কোচ নয় মালদ্বীপ হ্যান্ডবল তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আমজাদ বলেন ‘মালদ্বীপ ফেডারেশনের সবাই আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসা ও সম্মান দিয়েছে। হ্যান্ডবলের জন্য আমি যা করতে চেয়েছি তারা সবাই আমাকে সমর্থন দিয়েছে বলেই আমি করতে পেরেছি। আমার সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে মালদ্বীপ হ্যান্ডবলকে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি।’

বাংলাদেশে হ্যান্ডবল কোচিং এখনো পেশা হিসেবে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মালদ্বীপে বেশ ভালোই সুযোগ সুবিধা পেতেন বলে জানালেন আমজাদ, ‘মালদ্বীপে আর্থিক সম্মানি যথেষ্ট ভালো ছিল। আমার আবাসন এবং অন্যান্য বিষয়ও মালদ্বীপ হ্যান্ডবল ফেডারেশন অত্যন্ত আন্তরিক ছিল।’

আমজাদের যে গুণ তাতে এশিয়া ও আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবলের অনেক জায়গায় কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে মালদ্বীপ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সভাপতি ইসমাইল বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমজাদ হ্যান্ডবলে একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, তিনি আরো বড় ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য সক্ষম।তিনি বলেন আমার সকাল শুরুই হয় আমজাদকে শুভ সকাল জানিয়ে।’

উল্লেখ  ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপ জাতীয় হ্যান্ডবল দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের আমজাদ হোসেন। তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারও মালদ্বীপে এসেছেন  তিনি।