বিদেশে আসার পুর্বে আপনাকে অবশ্যই যে কয়েকটি বিষয়ে অবগত হতে হবে?

বিদেশে আসার পুর্বে আপনাকে অবশ্যই যে কয়েকটি বিষয়ে অবগত হতে হবে? বাংলাদেশ থেকে বিদেশ নামক জীবনটাকে সবারই সোনার হরিণ মনে হয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলব, বাংলাদেশ থেকে প্রবাস জীবনটাকে যত সুখি এবং সুন্দর মনে হয় এখানে আসার পরে বাস্তবে কিন্তু তা মনে হয় না।

বাংলাদেশে যারা মোটামুটি স্বচ্ছল ফ্যামিলিতে জন্মগ্রহন করেন তাদের জীবনটাকে ইউরোপ আমেরিকার জীবনের সাথে তুলনা করাটা বেমানান। কারন ইউরোপ আমেরিকায় এসে কাজ না করলে কেউ সুন্দর ভাবে বাঁচার সম্ভাবনা কম। ঘর-দুয়ার থেকে শুরু করে রান্না-বান্নার কাজ সহ সবকিছুই কিন্তু এখানে সবাইকে নিজ হাতে করতে হয়।

বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেও কিন্তু এখানে অনেকের রেহাই নেই। স্বামী স্ত্রী দুজনকেই কাজের ব্যস্ততায় এখানে ভাগ-বাটোয়ারা করে গৃহস্থলির কাজ সেরে নিতে হয়। নতুবা দু-চার বছরের মাথায় এখানে স্বামী স্ত্রীকে প্রায়শই পৃথক হয়ে যেতে দেখা যায়।

স্বামী-স্ত্রীর এই পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্বের মুল কারন হলো ইউরোপ আমেরিকার সাংসারিক ব্যয়ভার! এখানে অনেকে পারিবারিক ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই চাকুরি শুরু করতে হয়। এরপর ধীরে ধীরে সবার পরিবারে দেশে-বিদেশে পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বগুলো বেশীর ভাগই ছাড়াছাড়িতে গিয়ে ঠেকে।

বাংলাদেশে মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া সবারই বাসা-বাড়িতে এক-দুই জন কাজের লোক থাকে। এছাড়া অনেকের পরিবারে মা-বোন আছে যারা সর্বদা একে-ওকে দেখাশুনা করে।

এছাড়া বাংলাদেশে প্রত্যেকেরই বাসা বাড়িতে কেউ না কেউ একজন থাকে যে পানির গ্লাস থেকে শুরু করে থালা-বাসন, ভাত-তরকারি সবকিছুই রেডি করে এনে খাবার টেবিলে মুখে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এরপরও পরিবারের মানুষের বিরোদ্ধে কত জনের কত অভিমান! কত ঝগড়াঝাটি!

বাংলাদেশে অনেকে খাবার টেবিলে খেতে বসে প্লেইটে একটু ময়লা দেখলে সেগুলো ছুঁড়ে মারে, কেউ কেউ এজন্য মা-বোন অথবা কাজের মেয়ের ওপর রাগও ঝাড়ে। কিন্তু বিদেশে এসে এই লোকগুলোকেই পেটের খিদা নিবারণের জন্য নিজ হাতে খাবার রান্না করে খেতে হয়। কারো কারো এমনও হয় বিদেশে এসে অন্যের প্লেট ধুতে ধুতে জীবন শেষ হবার উপক্রম হয়।

২০০৭-৮ সালে ইংল্যান্ডে এসে একজনের সাথে আমারও এমন একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের প্রথম কর্ম জীবনে হঠাৎ কর্মসুত্রে ২০-২২ বছরের ঢাকার এক ভাই সুজন (ছদ্মনাম) এর সাথে দেখা। আলাপ পরিচয়ের পর জানতে পারি সে ঢাকার স্বনামধন্য একটি কলেজের এক শিক্ষকের একমাত্র ছেলে।

কথা প্রসঙ্গে একদিন সুজন আমাকে বলেছিল ‘ভাই, ফাকিং ইংল্যান্ডে এসে লাইফটা হেল হয়ে গেছে আমার। কি পাপের কারনে যে এই ইংল্যান্ডে এসেছি হিসাব মেলাতে পারছি না! কিভাবে করি এই শালার পুতের কাজ। দেশে থাকতে জীবনে একটা পিঁয়াজ কিভাবে কাটতে হয় দেখিনি! এখন এসে শালার পিঁয়াজ কাটতে কাটতে আমার চোখের পানিই শেষ হয়ে গিয়েছে। শালার মাইরে বাপ, মাইরি কেন যে এই বৃটিশদের প্লেট ধুতে ইংল্যান্ডে এলাম? দেশে ছিলাম প্রফেসারের ছেলে। শালার এখানে এসে হয়েছি ফকিন্নি কিচেন পোর্টার। ফকিন্নি সিঙ্ক মাষ্টার।’

এতটুকু কথা বলে সে একদিন ফাঁপিয়ে ওঠছিল। এরপর একটু রেস্ট নিয়ে সে বলেছিল, ‘ভাই, যখন দেখি কয়েকটা অশিক্ষিত(সহকর্মী) আমাকে এসে এই-এই কর, সেই কর অর্ডার দেয় তখন মনে হয় শালার পুতদের মুখে জুতা দিয়ে মারি।’

এভাবে কথা বলতে বলতে সুজন তার সুঠাম শরীরটা নিয়ে প্রায়দিনই কাহিল হয়ে পড়ত। এই সুজন অবশ্য রেস্টুরেন্টের কিচেনে কাজ করে করে পরবর্তীতে মোটামুটি ভাল একজন শেফ হয়ে গিয়েছিল।

ইংল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ হলে আমার প্রেরনায়ই একদিন সুজন ইংল্যান্ড ছেড়ে ফ্রান্সে গিয়ে পলিটিক্যাল এসাইলাম ক্লেইম করেছিল। এরপর সেখানে সেটেল্ড হয়ে সে দেশে গিয়ে ঢাকার একজন বিশ্ব সুন্দরীকে বিয়ে করে ফ্রান্সে নিয়ে এসেছিল। বর্তমানে সে বউ-বাচ্চা নিয়ে ফ্রান্সে আছে। সে কেমন আছে জানি না। সে হয়ত ফ্রান্সে সুখি জীবন যাপনই করছে।’

যাক আমি এবার মুল প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় এসে শতকরা নব্বই ভাগ মানুষই প্রথম প্রথম খুব হায় আফসোস ও অনুতপ্ত বোধ করে। এইসব দেশে এসে কঠোর পরিশ্রম ও ফ্রেমে বাঁধা জীবন যাপন দেখে প্রথম প্রথম সবারই চোখের পানি ঝরে। কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের পানিও ফেলে।

কিছুদিন পরে ধীরে ধীরে এই কঠোর জীবনের সাথে সবাই কোন না কোন ভাবে অভ্যস্ত হতে শুরু করলে বাংলাদেশের বেকার এবং স্লো জীবনটাকে তখন সবাই একটু আধটু করে ভুলে যেতে শুরু করে।

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় এসে কেউ কেউ কয়েক বছরে নিজেকে একটি মেশিনে রূপান্তরিত করে। নিয়মিত সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, নিয়মিত সময়ে কাজে যাওয়া, নিয়মিত সময়ে সওদাপাতি কিনে রান্নাবান্না করা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য সবাই একেকটি রুটিনওয়ার্কের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে।

এখানে স্বামী স্ত্রী অনেক সময় একই বেড রুমে ঘুমায় কিন্তু সপ্তাহে এক-দুই দিন ছাড়া একে অন্যের মুখ দেখাদেখিই হয় না।
এই মুখ না দেখাদেখির ছোট একটি উদাহরণ দেই। স্ত্রী যদি সকাল ৯টায় ওঠে অফিসে যায়, বাসায় ফিরে বিকাল ৫টায়।

অন্যদিকে স্বামী যদি বিকাল ৩টায় কাজে যায় দশ ঘন্টা কাজ শেষে বাসায় ফিরে রাত ২টায়। এই স্ক্যজুয়েলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া একে অন্যে দেখা হওয়ারই সুযোগ থাকে না।

এছাডা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এক জনের ছুটি মিললে অন্য জনের ছুটি নাও মিলতে পারে। দেখা যায় এই কারনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ধীরে ধীরে দুরত্ব সৃষ্টি হয় এবং এই দুরত্বের ফাঁকে স্বামী স্ত্রীর মধ্য খানে তৃতীয় জন কেউ এসে বাসা বাধে। এজন্যই স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে স্বামী প্রায়শই পরকিয়ায় জড়িত হয়ে পড়ে। এরপর সব সম্পর্কই শেষ হয়ে যায়।

মুল কথা সাংসারিক জীবনে নানা কাজকর্মের ভাগ বাটোয়ারা থেকে শুরু করে কাজকর্মের গ্যাড়াকলে পড়ে দুজনের সম্পর্কের অবনতি থেকে ইউরোপ আমেরিকায় অনেকের পরিবারে পারিবারিক বিপর্যয় নেমে আসে।

এখানে এসে রোবটিক জীবনে পা দিয়ে অবশেষে কেউ কারো জন্য কোন কিছু সেক্রিফাইস করতে আর রাজি হয় না। এ কারনে এখানে ধীরে ধীরে কেউ কাউকে একবিন্দু ছাড দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবারই এখানে শেষ হয়ে যায়।

এই দেশগুলোর সিস্টেমই এমন। নিজের কাজ নিজেকে করতে হয় এখানে। কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সওদাপাতি কেনা, রান্নাবান্না থেকে শুরু করে বাথরুমের ফ্লোর পর্যন্ত পরিস্কার করা প্রত্যেককে নিজ হাতে সেরে নিতে হয় এখানে।

বাসায় একটি চা-কফি খেতে চাইলে সেটাও নিজ হাতে তৈরি করতে হয় এখানে। নতুবা ব্যাচেলর হাউজ বলেন আর ফ্যামিলি হাউজ বলেন সবখান থেকেই আপনি আউট।

এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ আমেরিকায় আসা মানুষগুলো এইসব দেশে এসে কাজের চাপে বেশ বন্ধু-বান্ধব জুটাতে পারে না। তাই অনেকে এখানে একাকিত্বে ভোগেন। এটি অনেকের জন্য অনেক সময় খুব কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে।

মিডলইস্টের কি অবস্থা জানি না। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার নামি-দামি চেইন রেস্টুরেন্ট ম্যাকডোনাল্ড, ডানকিন ডুনাহ, টিমহর্টন, কেএফসি এবং স্টারবুকসের মত বড় বড় শপের কাউন্টারে গিয়ে এখানে নিজে দাঁড়িয়ে খাবার অর্ডার করতে হয়। এরপর কাউন্টার থেকে সেগুলো নিজ হাতে ট্রেতে করে টেবিলে নিয়ে খেতে হয়।

খাওয়াদাওয়া শেষে সবাইকে জুট্টার প্লেটগুলো এখানে নিজ দ্বায়িত্বে গার্বেজ করে ট্রে’টা আবার কাউন্টারের সংরক্ষিত স্থানে রেখে রেস্টুরেন্ট ছাড়তে হয়। এটাই এখানকার নিয়ম।

আপনি এমপি, মন্ত্রী কিংবা লাঠ সাহেব যাই হোন ইউরোপ আমেরিকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অফিস আদালত, শপিং মার্কেটের সর্বত্র আপনি একজন শ্রেফ সাধারন মানুষ। এই দেশগুলোয় এমপি মন্ত্রীর যে ভ্যালু সাধারন একজন পাবলিকেরও সেই ভ্যালু।

এখানে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া অথবা মিডলইস্টের শেখ সাহেবদের মত কারোই দাদাগিরি চলে না। এজন্য কোন ভয়ও কাজ করে না যে পিছন থেকে কেউ একজন এসে গুতো মেরে আপনাকে লাইন থেকে তাড়িয়ে তার কাজ সেরে চলে যাবে। ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ নীতি এখানে মেনে চলতে হয় সবাইকে। এজন্য থার্ড ওয়ার্ল্ডের এমপি মন্ত্রীরাও এই দেশগুলোতে এসে বসবাসের জন্য পাগল হয়ে সুযোগ খুঁজে।

এই দেশগুলোয় একটি রোডে একদিন দুশো গাড়ি জ্যামে আটকে গেলে পরদিন একটি বিকল্প রোড চালুর চেষ্টা করে এরা। এরা মরার পর বেহেস্তে যাবার চিন্তা করে না তাই ভাবে এই দুনিয়াটায় যতদিন আছি ততদিন যেন এই জীবনটাকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করি। এজন্য এখানে সবাই সমান। সবাই একই নিয়মের অধীন।

একজন মন্ত্রীর ছেলে এখানে যতটা সরকারি সুযোগ সুবিধা পায় সাধারন একটি ভিক্ষুকের নামেও ঠিক ততটা সুযোগ সুবিধাই এখানে বরাদ্ধ হয়। এজন্যই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধনী গরীব সবাই এই দেশগুলোতে এসে বসবাসের জন্য হুমড়ি খায়।

যাক শেষ কথায় আসি: যদি ভাবেন নিজের কাজ নিজে করব এবং একটু আধটু করে হলেও ফ্রেমে বন্দী জীবনে অভ্যস্ত হতে পারব তাহলে এই দেশগুলোয় আসুন। নতুবা নো বিদেশ অনলি বাংলাদেশ। আশা করি এই লেখাটি পড়ে কেউ কেউ বিদেশ জীবন সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পাবেন।

প্রকাশকঃএম এইচ, কে , উপদেষ্টা সম্পাদক,জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃনির্বাহী সম্পাদকঃ বার্তা সম্পাদকঃ সাইদুর রহমান মিন্টু এএনবি২৪ ডট নেট নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকে । তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি anb24.net is one of the most popular Bangla News publishers. It is the fastest-growing Bangla news media that providesective news within the accurate and obj shortest poassible time.anb24.net intends to cover its reach throughout every district of the country, also global news of every segment such as politics, economics, sports, entertainment, education, information and technology, features, lifestyle, and columns anbnewsbd@gmail.com /mahamudulbd7@gmail.com mahamudul@anb24.net