প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? তাদেরকে যদি চাইতে হয়, তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আমাদের কোনো আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য সেটা হচ্ছে, আমার যেটুকু সরকার হিসেবে ক্ষমতা আছে, সেটা আমি তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার পারমিশনটা দেয়া হয়েছে এবং তার চিকিৎসা ব্যবস্থা। সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছে এখন। বাংলাদেশের সব থেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর যদি তাদের যেতে হয় বাইরে তখন…এই এখন যে তাকে আমি বাসায় থাকার পারমিশনটা দিয়েছি এটা আমাকে উইথড্র করতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেয় তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী এমন সময় এ কথা বললেন যখন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবারও আবেদন করেন। এ বিষয়ে মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত সোমবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্ত যুক্তভাবে তার সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত মুক্তি দেয়া হয়েছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায়। এখন আইনের যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে খালেদা জিয়াকে দেওয়া শর্তযুক্ত মুক্তি আগে বাতিল করতে হবে। বাতিল করে আগের অবস্থায় যাওয়ার পর আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। আইন মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হয়। পরে দুদকের আরও একটি মামলায় তার দণ্ড হয়। সেই সময় থেকে বেশ কিছুদিন পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে রাখা হয়।
দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এজন্য রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়া এবং চিকিৎসা নিতে বিদেশে না যাওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।
গত ৯ আগস্ট থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয় বিএনপি চেয়ারপারসন। তখন থেকে তিনি হাসপাতালেই আছেন। খালেদার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাকে বিদেশের কোনো এডভ্যান্স সেন্টারে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্যদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো সমাধান হয়নি। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন।