বছরে ২৫ কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রি হয় বুড়িচংয়ে

, বুড়িচং, কুমিল্লা।।

যতদূর চোখ যায় সাদা পলিথিনের ছাউনি দেয়া। ছাউনির নিচে সবুজ ছোট চারা। কোনটা মরিচের কোনটি তাল বেগুনের, আবার কোনটা লাউয়ের। কৃষকরা ব্যস্ত চারার পরিচর্যায়। জমির পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন পাইকাররা। দরদাম শেষ হলে সবজির চারা নিয়ে যাবেন নির্দিষ্ট স্থানে। এমন দৃশ্য দেখা যায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে। যে গ্রামের মানুষদের অধিকাংশের প্রধান জীবিকা সবজির চারা উৎপাদন। এসব গ্রামে বছরে অন্তত ২৫ কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রি হয় ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শুধু বুড়িচং নয় এই চারা উৎপাদন অন্য উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৪০/৫০ বছর ধরে জেলার বুড়িচং উপজেলার ডাকলাপাড়া, কালাকচুয়া, সমেশপুর, কাবিলা, নিমসারে চারা উৎপাদন ও বিক্রি হয়ে আসছে। চারা উৎপাদনের এই কাজটি এখন চান্দিনা , দেবিদ্বার , বরুড়া ও সদর দক্ষিণ উপজেলায়ও শুরু হচ্ছে। জুন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চারা চাষ ও বিক্রি করা হয়। এসব চারা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বাজারে নিয়ে কোন চারা বিক্রি করেন না। অধিকাংশ ক্রেতা জমিতে এসে দেখে নিয়ে যান। কেউ কেউ অর্ডার করলে বাসে তুলে দেন। চারার মান ভালো হওয়ায় সারা দেশে এই এলাকার চারার সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে, ফুলকপি, বাঁধা কপি, টমেটো, বেগুন, লাউ, কুমড়া সহ বিভিন্ন জাতের উন্নত সবজির চারা উৎপাদন ও বিক্রি হয়ে থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে প্রতি মৌসুমে ২৫ কোটি টাকার বেশি সবজি চারা বিক্রি হয় এসব এলাকায়। এইসব চারা জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এর সাথে জড়িত আছে ৫ শতাধিক কৃষক প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির রানীর প্রাসাদ পার উত্তরে গেলে শান্ত সুনিবিড় সমেষপুর গ্রাম এই গ্রামটিকে চারার গ্রাম নামেও চিনে সবাই। বছরের এই সময়টাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে চারার বীজতলা তৈরী, মাটি থেকে উকি দেয়া চারার যত্নআরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউবা আবার ক্রেতাদের কাছে চারা তুলে দিচ্ছেন।

সোবহান, আবদুল হাশেমসহ আরো কয়েকজন কৃষক জানান, বীজ ও সারের দাম বাড়ায় লাভ কম হচ্ছে। ৪ বছর আগে এক কেজি ফুলকপির বীজ ছিলো ৭৫ হাজার টাকা, বর্তমানে তা ৯৬ হাজার টাকা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ডাকলাপাড়া। স্থানীয়রা জানান, এই গ্রামেই সর্ব প্রথম চারা উৎপাদনের কাজ শুরু হয় প্রায় ৫০ বছর আগ থেকে।কালক্রমে তা এখন দেশের  বিভিন্ন জেলা,উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে কয়েকটি জমি। জমিতে সারি সারি বীজতলা। কোন জমিতে ক্রেতা বিক্রেতার দর কষাকষি চলছে। কোনটিতে ক্রেতার জন্য চারা তোলা হচ্ছে। কোনটিতে পানি ছিটানো হচ্ছে। কে কেউ জমির কোনে স্থাপিত মাচায় বিশ্রাম নিচ্ছেন, কেউ খাবার খাচ্ছেন।

কামাল হোসেন নামের ফেনী থেকে এক ক্রেতা বলেন, বুড়িচং থেকে আমরা প্রতি বছর চারা নিয়ে যাই। এখানের চারার মান বেশ ভালো, দামেও সাশ্রয়ী। নরসিংদী থেকে আসা সোহেল মিয়া বলেন, অন্য জায়গার চারার চেয়ে ভবলাপাড়ার চারা অনেক ভালো। ফলন ভালো হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিণা আক্তার বলেন, জেলার সবচেয়ে বেশি চারা উৎপাদন হয় বুড়িচংয়ে। উপজেলার সমেশপুরে বেশি চারা উৎপাদন হয়। এখানের চারা অর্থনীতিতে  ভালো ভূমিকা রাখছে। তাদের আমরা কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ- পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, জেলার ১১৪ হেক্টর জমিতে সবজির চারা উৎপাদন হয়। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো দক্ষ করে তুলবো এবং সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

এএনবি২৪ নিউজ ডেস্ক/ গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির।