পৃথিবীতে বংশধারা রক্ষার ক্ষেত্রে অস্তিত্ব সংকটে আছে পুরুষ। Y ক্রোমোজমের ক্রমাগত পরিবর্তনের জন্য এই সংকটের আশঙ্কা করছে বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকাশনা পিএনএএস সম্প্রতী একটি গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এবিপি আনন্দ।
গবেষণা পত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবদেহের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোামের মধ্যে লিঙ্গ নির্ধারণ ক্রোমোজম হলো XX ও XY। মেয়েদের ক্ষেত্রে হয় XX ও ছেলেদের ক্ষেত্রে XY। Y ক্রোমোজোম থেকে গর্ভবস্থায় পুরুষাঙ্গ তৈরি হয়। । কিন্তু এই Y ক্রোমোজমেই জিনের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।
গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, X ক্রোমোজোমের তুলনায় Y ক্রোমোজোম আকারে ছোট। জিনের সংখ্যা ও X ক্রোমোজম থেকে কেম। যেখানে X ক্রোমোজোমে জিনের পরিমান ১০০০ সেখানে Y ক্রোমোজোমের জিনের পরিমান মাত্র ৫০-২০০টি। গত ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছরে প্রায় ১৬০০ জিন হারিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ প্রতি ১০ লক্ষ বছরে ১০টি করে জিন হারিয়েছে Y ক্রোমোজম। এরকম ক্রমাগতভাবে Y ক্রোমোজোমের সঙ্কোচন হওয়ায় পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণকারী এই ক্রোমোজোমটি এক সময় অস্তিত্বহীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিজ্ঞানীরা। Y ক্রোমোজোমের বিলুপ্তি হলে পুরুষও বিলুপ্তি হয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে বেশ ভাবনায় আছে বিজ্ঞানীরা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কেন Y ক্রোমোজম সঙ্কুচিত হয়ে চলেছে, এখনও পর্যন্ত এর কারণ খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, Y ক্রোমোজম সম্পূর্ণ একাকী। কোনও বন্ধু নেই যে তার সঙ্গে জিন লেনদেন করবে। তাই যত সময় যাচ্ছে, তাদের সংখ্যা কমছে। তাই বলে পৃথিবী থেকে পুরুষ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, একথা মানতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, বর্তমানে Y ক্রোমোজমটি যেভাবে আকার বদলাচ্ছে, তাতে মিলিয়ে যেতে আরও কয়েক লক্ষ বছর সময় লাগবে তাদের। ততদিনে বিকল্প ক্রোমোজম Y তার জায়গা দখল করবে। কারণ মানবশরীর জিনের পরিবর্তে জিন গড়ে তুলতেই অভ্যস্ত।
সম্প্রতি এ নিয়ে Proceeding of the National Academy of Science-এ আরেকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়, যাতে জাপানে বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়। ওই পরীক্ষায় দেখা যায়, ইঁদুরের শরীরে Y ক্রোমোজম সম্পূর্ণ ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তার পরিবর্তে নতুন একটি জিন তৈরি হয়েছে। বিবর্তনের ইতিহাসও বিকল্প ক্রোমোজম তৈরির সাক্ষী। একাধিক এমন প্রাণী রয়েছে, যাদের Y ক্রোমোজম একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে, লিঙ্গ নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি গড়ে উঠেছে শরীরে। মানুষের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।