জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের তহবিল দেবে ফ্রান্স। বাংলাদেশে সফরের সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সঙ্গে আলোচনায় এর নিশ্চয়তা মিলেছে। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এ তথ্য জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় ১৮ হাজার ৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার ১৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ১ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প নিতে হবে। সুন্দরবন গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া জলাভূমি অঞ্চলে সড়ক সংস্কার করতে হবে। পানির চাপ বাড়লে অধিক কালভার্ট ও ব্রিজ বানাতে হবে। সেতু বানালে উচ্চতা খেয়াল করবেন, নকশা ভালো হতে হবে কাজ করতে গিয়ে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, পানি ব্যবহারে অনেকে সচেতন না।
পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। পানির ব্যবহারে মানুষ যেন মৃতব্যয়ী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচের একটা সমন্বয় করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সবাইকে পানির অপচয় বন্ধ করতে বলেছেন। অনেকে পানির ট্যাপ ছেড়ে রাখেন, এটা যেন না হয়, এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ট্যাক্স সংক্রান্ত মামলা পড়ে আছে, এটাকে আইন মেনে ফয়সালা দিতে হবে। কর সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে একনেক সভায় গতকাল ১৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজ অনুমোদিত ১৯টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ১২ হাজার ৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৪৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হলো-সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন)’ প্রকল্প, ‘ফেনী (মোহাম্মদ আলী বাজার)-ছাগলনাইয়া-করেরহাট সড়ক (ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক) (জেড-১০৩১) প্রশস্তকরণ এবং ফেনী নদীর উপর শুভপুর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প এবং ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্বাসন ও পুনঃনির্মাণ’ প্রকল্প।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নং গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ’ প্রকল্প, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (রাস্তা ও ড্রেন)’ প্রকল্প, ‘রায়েরবাজার এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্প এবং ‘উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (স্বপ্ন)-২য় পর্যায়’ প্রকল্প। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাজার মসজিদ নির্মাণ’ প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সমপ্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল এবং কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্প।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজ সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারকরণ’ প্রকল্প; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘মেঘনার শাখা নদীর ভাঙন থেকে হিজলা উপজেলাধীন পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প, ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প এবং ‘চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন’ প্রকল্প; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্প; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প।