প্রবাস জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্য দৃষ্টান্ত: ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কৃতিসন্তান মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী

 

মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কৃতি সন্তান মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী প্রবাসে থেকেও নিজের জন্মভূমির উন্নয়নে  অন্যান্য  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আড়াই হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তিনি প্রায় পাঁচ একর জমি দান করেছেন।

 

প্রবাস জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্য

মোশারফ হোসেন মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৮৩ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে জীবিকার সন্ধানে কাতার যান। এরপর ১৯৮৯ সালে তিনি নিউইয়র্কে পাড়ি জমান এবং জীবিকার প্রয়োজনে ট্যাক্সিক্যাব চালানোসহ বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো কাজ করেন। সম্প্রতি তিনি নিউইয়র্কে একটি ফাস্টফুডের দোকান চালু করেছেন। তবে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান বাংলাদেশেই থাকেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে একা কোনোরকমে থাকি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গেলে খরচ বেড়ে যেত। তা ছাড়া গ্রামে যে কাজগুলো করছি, সেগুলো করা সম্ভব হতো না।’ তিনি তার স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

 

শিক্ষা ও সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা
শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা নয়, মোশারফ হোসেন নিজ খরচে দুটি গ্রন্থাগারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া ঈদগাহ, কবরস্থান, মসজিদের উন্নয়নেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ডায়াবেটিস হাসপাতাল তৈরির জন্য তিনি জমি কিনে দিয়েছেন। আর্থিক অনটনের কারণে যাতে গরিব শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য তিনি একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন, যার মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

মানবিক দৃষ্টান্ত: শতবর্ষী বটগাছ রক্ষা
সম্প্রতি মোশারফ হোসেনের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ব্রাহ্মণপাড়া শ্রীশ্রী কালীমন্দির জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল এবং উপাসনা ব্যাহত হচ্ছিল। মন্দির চত্বরে থাকা শতবর্ষী বটগাছটি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হলে মোশারফ হোসেন দ্রুত মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এক লাখ টাকায় গাছটি কিনে আবার মন্দিরকেই দান করেন।

মন্দির রক্ষা কমিটির সভাপতি তপন কান্তি দেব বলেন, ‘এই গাছটি এখন তার আয়ুষ্কাল অবধি বেঁচে থাকবে। এলাকার হিন্দু-মুসলিম সবাই মোশারফ হোসেনের এই মহৎ উদ্যোগের কথা মনে রাখবেন।’

সম্মান ও স্বীকৃতি
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মোশারফ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ নিয়ে গেলে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ, সবাই জানেন, তিনি প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থ নিঃস্বার্থভাবে দেশের শিক্ষা ও সমাজকল্যাণে ব্যয় করছেন। কুমিল্লা সদর, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার অনেকেই তার অবদান স্বীকার করেন এবং তাকে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করার আহ্বান জানান।

রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনা?
রাজনীতিতে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চাশোর্ধ্ব মোশারফ হোসেন বলেন, ‘রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ছিল, আছে এবং থাকবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার জেলা ও জন্মভূমি ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তবে কেউ যদি আমাকে অপছন্দ করে, কেন করে তা আমি জানি না।’তবে আমি আমার দেশ ও জেলা নিয়ে স্বপ্ন দেখি

প্রবাসে থেকেও নিজের জন্মভূমির উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ মোশারফ হোসেন খান চৌদুরী। শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা এবং সামাজিক উন্নয়নে তার অবদান সত্যিই অনুকরণীয়। তার মহৎ উদ্যোগ ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।