প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুবসমাজকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’
আজ বুধবার (১ নভেম্বর) ‘জাতীয় যুব দিবস’ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া বাণীতে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত করার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও কৃষিভিত্তিক বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। আমাদের সরকার প্রশিক্ষিত যুবদেরকে জামানতবিহীন যুবঋণ দিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। যুবদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রবাসেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাতীয় যুব দিবস পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের তারুণ্যদীপ্ত যুবসমাজকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট যুব সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ যা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুব কল্যাণ তহবিল আইন-২০১৬ প্রণয়ন করেছি। স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনগুলোকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে যুব সংগঠন নিবন্ধন ও পরিচালনা আইন-২০১৫ ও যুব সংগঠন বিধিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। যুবসমাজের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় যুব কাউন্সিল বিধিমালা-২০২১, জাতীয় যুবনীতি-২০১৭, জাতীয় যুবনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা, ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স-২০১৯ ও যুব উদ্যোক্তা নীতিমালা-২০২২ ও যুব প্রশিক্ষণ নীতিমালা-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ ছাড়া ৭৫ সদস্যের জাতীয় যুব কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। যুবদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, নেতৃত্ব সৃষ্টি, প্রতিভা বিকাশ, ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাভারে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় যুব কাউন্সিল গঠনের কাজ চলমান রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে জীবন বাজি রেখে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে লাল-সবুজের একটি নতুন দেশ সৃষ্টি করে এদেশের যুবসমাজ। যুবদেরকে তিনি সংগঠিত করেছিলেন দেশপ্রেমের মহান দীক্ষায়। জাতির পিতা স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশ পুনর্গঠনেও যুবসমাজকে কাজে লাগান এবং শিক্ষিত ও কর্মদক্ষ যুবসমাজ সৃষ্টিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন ও রূপরেখা প্রণয়ন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশের যুবসমাজকে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার পথে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই জনমিতিক সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার-২০১৮ এ যুব সম্পর্কিত অঙ্গীকার ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’কে বিবেচনায় নিয়ে যুবদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্বদানে সক্ষম স্মার্ট যুবসম্পদ তৈরি করতে সারাদেশে হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার ও বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত অর্থ আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানও বেগবান হয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি—এ চারটি মূলভিত্তির ওপর ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ। টেকসই ও জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী দেশ হবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।’
এদেশের অদম্য যুবসমাজ জাতির প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ দেশের যুবদের বুকে অদম্য শক্তির যে বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে গেছেন, মানুষের জন্য কাজ করার যে প্রেরণা তিনি জুগিয়েছেন, সেই প্রেরণা নিয়ে এদেশের যুবসমাজ মাথা উঁচু করে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে—এটাই প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় যুব দিবস’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।