দেশের ১০ কোটি মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বেলা ১১টার পর গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই কর্মসূচি উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
এর ফলে আজ থেকেই দেশে-বিদেশে বসবাসরত ১৮ বছরের বেশি বয়সী যেকোনও বাংলাদেশি পেনশনের আওতায় আসার সুযোগ পাবেন। সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে ৪ ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু হলো। সেগুলো হলো-প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে পেনশন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়ার বাকি সময় মাসিক ভিত্তিতে পেনশন পাবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কেউ মারা গেলে জমা হওয়া অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন নমিনি। পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং মাসিক পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
পেনশন ব্যবস্থা পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা অর্থ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে গতকাল বুধবার। ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.upension.gov.bd।এতে বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’ ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করা আছে। দেশের ভেতরে আমাদের ব্যাংকের ১ হাজার ২২৯টি শাখাই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
[bs-white-space]
দেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিমটি সম্পূর্ণ নতুন। এজন্য কিছু নিয়মকানুন দিয়ে সম্প্রতি যে বিধিমালা জারি করা হয়েছে, সেখানে বলা হয় ধারাবাহিক তিনটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। পরবর্তী সময়ে পুরো বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল হবে না। নির্দিষ্ট তারিখে চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানাবিহীন পরিশোধ করা যাবে। এরপর প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে হিসাবটি সচল করা যাবে। এছাড়া একজন চাঁদাদাতা আগাম কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন।
সেখানে আরও বলা হয়, অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে ১২ মাস পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না। আরও বলা হয়, কোনো চাঁদাদাতা ৭৫ বছরের আগে নিখোঁজ হলে এবং নিখোঁজ হওয়ার পর সাত বছর অতিবাহিত হলে তার হিসাব স্থগিত করে নমিনিকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এছাড়া কেউ চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে অর্থ উপার্জন না করতে পারলে তাকে অসচ্ছল চাঁদাদাতা ঘোষণা করতে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবে।
সরকারের পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে টাকা সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত তফশিলি ব্যাংক বা ব্যাংকের শাখা, উপশাখাকে সম্মুখ অফিস হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকালে এই সম্মুখ অফিসের কেউ দুর্নীতি বা অনিয়ম করলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া এই স্কিমের আওতায় চাঁদাদাতা স্কিমের স্বত্ব অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না। তবে স্কিম চলাকালীন কেউ মারা গেলে মনোনীত নমিনির নামে হস্তান্তর করা যাবে। এছাড়া চাঁদাদাতা তার মোট জমানো অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন। এটি পরবর্তী ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
আইন অনুযায়ী, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় চারটি স্কিম থাকছে। প্রথম হচ্ছে প্রবাসী স্কিম, যা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা দেশীয় মুদ্রায় এই হিসাব খুলতে পারবেন। প্রবাসীরা ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও বৈধ চ্যানেলে এর কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। দ্বিতীয় হচ্ছে প্রগতি স্কিম, এটি বেসরকারি চাকরিজীবী ও প্রতিষ্ঠানের জন্য। তৃতীয় হচ্ছে সুরক্ষা স্কিম, এখানে স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং চতুর্থ সমতা স্কিমে স্বল্প-আয়ের নাগরিকরা অংশ নেবেন। আপাতত সীমিত আকারে পেনশন কর্মসূচি চালু করা হবে।
এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে। মাসিক চাঁদা হবে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন এক হাজার টাকার মধ্যে পাঁচশ টাকা সরকার প্রদান করবে। পেনশনব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কর্মকা- হবে অনলাইনে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করেও চাঁদা দেওয়া যাবে। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সিরা এতে অংশ নিতে পারবেন। তবে শর্ত হচ্ছে অংশ নেওয়ার দিন থেকে টানা দশ বছর চাঁদা পরিশোধ করতে হবে। এরপর তিনি যে বয়সে উপনীত হন, সে বয়স থেকে পেনশন পাবেন।
৭৫ বছর বয়সের আগে কোনো পেনশনার মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের পেনশন প্রাপ্য হবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কোনো পেনশনার মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে দেওয়া হবে। কোনো প্রয়োজনে চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে নেওয়া যাবে এবং নির্ধারিত ফিসহ তা পরিশোধ করতে হবে। বিনিয়োগ বিবেচনায় পেনশনের চাঁদা কর রেয়াতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
[bs-white-space]