শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ৷ ছাত্রজীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সর্বশেষ তিনি বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন দুইবারের সংসদ সদস্য।
বিএনপির এই নেতাকে রাতের অন্ধকারে বাসা থেকে জোরপূর্বক তুলে আনার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় এই নেতার আটক নিয়ে মুখ খুলছে না পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আচরণে বিরোধীদের মনে নানান প্রশ্নের দানা বেঁধেছে।
এ্যানিকে আটক নিয়ে ধোঁয়াশা কেন- এ বিষয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা কেউ সাড়া দেননি।
এদিকে বুধবার গভীররাতে এ্যানিকে ধানমন্ডির বাসা থেকে আটকের আগে তিনি গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ দরজায় লাথি মারছে। হুমকি দিচ্ছে- দরজা না খুললে দরজা ভেঙে ঢুকে আমাকে গুলি করবে। আমি সব মামলায় জামিনে আছি বর্তমানে, তারপরও তারা বেআইনিভাবে আমাকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতাকে কোন অভিযোগে আটক করা হয়েছে সেটা জানতে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম, ধানমন্ডি জোনের এসি আবু তালেব, রমনা বিভাগে উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আশরাফ হোসেনের বক্তব্য জানতে ফোন করা হয়। তবে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
বিএনপি বলছে, এ্যানি সব মামলায় আদালত থেকে জামিনে আছেন। বিরোধী দল মত দমন নীতির কারণ সরকার তাকে আটক করেছে। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই তাকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। সরকার বিএনপিকে ভয় পায় এ কারণে নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে। বহির্বিশ্ব বারবার তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বললেও সরকার একই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও জানা গেছে, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ১৯৬৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা হাজী পানা মিয়া, যিনি বৃটিশ শাসনামলে চর কাদিরা ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দুই চাচাত ভাই সাহাবুদ্দিন চৌধুরী এবং চৌধুরী খোরশেদ আলম এক সময়ে লক্ষ্মীপুরে সংসদ সদস্য ছিলেন।
আরও পড়ুন: গুলির হুমকি দিয়ে মধ্যরাতে বিএনপি নেতা এ্যানিকে আটক।
ব্যক্তিগত জীবনে এ্যানি দুই পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক। তিনি লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর উপজেলা) আসন থেকে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬-১৯৯৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এ্যানিকে তুলে নেওয়ায় রিজভীর নিন্দা:
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গভীর রাতে দরজা ভেঙে তুলে নেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার সকালে ঢাকা টাইমসকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন ‘চারদিক থেকে সরকার পতনের আওয়াজ উঠায় তারা বেসামাল হয়ে আবারও গ্রেফতার নির্যাতন ও ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু এসব করে তাদের শেষ রক্ষা হবে না।’
রিজভী বলেন, ‘শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সব মামলায় জামিনে থাকার পরও তাকে বাসা থেকে ডাকাতদের মতো তুলে নিয়ে আসা মানে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা, কিন্তু জনগণ আর নিপীড়নকে ভয় পায় না। বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসী বিশ্বাস করে তারা আর জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। সুতরাং যতই গ্রেপ্তার নির্যাতন হোক না কেন পতন ঠেকানো যাবে না। রিজভী আহমেদ অবিলম্বে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির মুক্তি দাবি করেন।