সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা জুড়ে যে তাণ্ডব এবং নাশকতা হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং সমন্বয়হীনতা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের উত্তর এবং দক্ষিণের সাংগঠনিক দুর্বলতা ভয়ঙ্করভাবে ফুটে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ের সংকটে। আর এর পেছনে কারণ হিসেবে অনেক নেতাই মনে করছেন কমিটি বাণিজ্য, পদ বাণিজ্য হওয়ার কারণেই আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ একেবারে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। প্রায় তিন বছর হতে চলল কিন্তু এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল বটে তবে সেই তালিকা হস্তান্তর করার পর থেকেই জানা যায় যে টাকা নিয়ে বিভিন্ন অযোগ্য এবং অনুপ্রবেশকারীকে কমিটিতে রাখা হয়েছে এবং তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে ওই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এবার যখন সংকট শুরু হয় তখন দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিভিন্ন জায়গায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারিননি। এমনকি অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকেও মাঠে দেখা যায়নি। ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি যে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী অবস্থানে নেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরকে ঢেলে সাজাতে যাচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান অবস্থার উন্নতি হলে ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে এবং আহবায়ক কমিটি গঠিত হতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে এই দুই কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ দুটি কমিটিতে যারা রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করতে পারে, যারা দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করেছে এবং ত্যাগী পরীক্ষিত তাদের সামনে আনার পরিকল্না নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের একটি কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আয়োজন করবেন এবং এই সভায় তিনি সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতা এবং পৈশাচিকতার সময় আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন বলে জানা গেছে। তবে তার আগেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল গতকাল এবং আজ দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আত্মসমালোচনা করছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন, ঢাকা মহানগরের উত্তর এবং দক্ষিণের বর্তমান যে নেতৃত্ব রয়েছে তা নিয়ে সংগঠন পুনর্গঠন করা অসম্ভব। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ এখন মনোযোগী হচ্ছে নতুন করে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের কমিটি ঢেলে সাজাতে। তবে এই ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শুরু হবে বা কিভাবে হবে সে সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের অবস্থার পরিস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন করছি। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা এ ব্যাপারে হাত দেবে।