কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানির সঙ্গে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার আলোচনাকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য চুক্তির ক্ষেত্রে ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিবিসি লিখেছে, চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে মতপার্থক্য আছে তা নিরসনে জটিল আলোচনার প্রাথমিক পদক্ষেপ মনে করা হচ্ছে একে।
গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে হামাস প্রতিক্রিয়া জানানোর পর চুক্তির জন্য সবশেষ আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে মোসাদ প্রধানের সফরকে।
হামাস দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে। তার পাল্টায় ইসরায়েল বলছে, ‘প্রয়োজনে’ ফের গাজা যুদ্ধ হতে পারে-এমন স্বাধীনতা থাকতে হবে। ইসরায়েলের এমন অবস্থানকেই চুক্তির জন্য প্রধান বাধা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিষয়ে হামাস ঠিক কী জবাব দিয়েছে তা এখনো প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেই তুলনায় বর্তমান পদক্ষেপ অনেক বেশি ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েলের মধ্যস্থতাকারী দলের একজন বলেছেন, হামাস যে জবাব দিয়েছে তাতে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির’বার্তা আছে।
বিবিসি লিখেছে, বাইডেনের প্রস্তাবের মূল কথা হামাস মেনে নিয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলছে। তার মানে স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে প্রথম পর্বে ছয় সপ্তাহের জন্য যে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনায় যাবে গোষ্ঠীটি।
হামাস চুক্তির প্রশ্নে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে অসম্মতির কথা জানিয়েছে। এখন যদি তারা ছাড় দিয়েছে বলে স্পষ্ট হয়, তাহলে ধরেই নিতে হবে বল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে চলে আসবে।
যুদ্ধবিরতির পরও হামাস নির্মূল এবং গাজা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ছাড় দেবেন-এমন কোনো কথা নেতানিয়াহু এখনো প্রকাশ্যে বলেননি। এই অবস্থান পরিবর্তনের জন্য ইসরায়েলের ভেতর ও বাইরে থেকে চাপ এলেও তাতে গা করেনি তিনি। কিন্তু সব পক্ষ থেকেই তার ওপর চাপ বাড়ছেই।
সবশেষ চাপটি তার সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমান ও সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস যদি ক্ষমতায় থাকেও-তার পরও গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু করতে চান ইসরায়েলের শীর্ষ জেনারেলরা।
এই খবরকে পরাজয়বাদী বর্ণনা করে উড়িয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। কিন্তু তিনি হয়তো এমন চাপ সবসময় সামাল দিতে পারবে না; ইতোমধ্যেই জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের সড়কে বিক্ষোভের ঘটনা বেড়েছে।
অন্যদিকে হামাসের ওপরও গাজার বেসামরিক মানুষের চাপ বাড়ছে; যাদের মধ্যে অব্যাহত যুদ্ধ নিয়ে হতাশা বাড়ছে। আর আন্তর্জাতিকভাবে যারা মধ্যস্থতা করছে, সেই মিশর, কাতারের ধৈর্য হয়তো ফুরিয়ে আসছে বলে লিখেছে বিবিসি।
আঞ্চলিক দেশগুলো যারা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আন্তরিকভাবে সমর্থন করে, তারাও একটি চুক্তি মেনে নিতে হামাসকে ক্রমবর্ধমান চাপ দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি ওই অঞ্চলের যেসব দেশের আন্তরিক সমর্থন আছে, তারা চুক্তি মেনে নিতে হামাসকে চাপ দিচ্ছে। রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে হামাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন তাদের টিকে থাকাকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুদ্ধ বন্ধের উপায় খোঁজার তাগিদ অনুভব করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও; কারণ ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধের জন্য শঙ্কা জোরাল হচ্ছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে এই উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে।
গত সপ্তাহে প্রতিদ্বন্দ্বী ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন নাস্তানাবুদ হওয়ায় এখন তার প্রশাসনের জন্য কূটনৈতিক সফলতা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিবিসি লিখেছে, সবমিলিয়ে বাধা কাটিয়ে স্থিতিশীলতার জন্য এবার আশার আলো দেখা যেতে পারে।