শুরুটা দাপুটে ব্যাটিং দিয়েই শুরু করেছিল লংকানরা। তবে অল্প সময়েই বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে রানের চাকা। শুরুতেই এক উইকেট হারিয়ে উইকেটে থিতু হবার চেষ্টা করেছিলেন লঙ্কান ব্যাটাররা। প্রায় ১৬ ওভার পর্যন্ত সফলও ছিলেন তাঁরা। কিন্তু রান তুলতে পারেননি তেমন। বাংলাদেশি পেস ও স্পিন বোলিং এ যেন সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। লঙ্কান এক সাদিরা ছাড়া বড় ইনিংসের দেখা পাননি কোনো ব্যাটার। তবুও তাদের ২৫০ এর মধ্যে কে আটকাতে পারেননি বোলাররা। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভার খেলে ৮ উইকেট হারিয়ে শ্রীলংকার সংগ্রহ ২৫৭ রান। বাংলাদেশকে জিততে হলে ২৫৮ রানের লড়াকু লক্ষ্য পেরোতে হবে।
শনিবার কলম্বোয় এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে ২৫৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে এই রান করে তারা।
এশিয়া কাপে আগের তিন ম্যাচেই সাকিব আল হাসান জিতেছিলেন টস, সিদ্ধান্তটাও ছিল একই- ব্যাটিং। এ ম্যাচে বদলে গিয়ে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান, তবুও বদলায়নি একটা ব্যাপার- বাংলাদেশের বোলারদের ভালো বোলিং। শুরুর দিকে রান আসছিল, কিন্তু বোলাররা দুর্দান্ত করছিলেন। তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে আম্পায়ার আঙুলও তুলেছিলেন, কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান পাথুম নিশাঙ্কা।
ষষ্ঠ ওভার করতে এসে প্রথম দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হজম করেন হাসান মাহমুদ। কিন্তু তৃতীয় বলেই তিনি পান উইকেট। তার দারুণ এক বলে উইকেটের পেছনে দিমুথ করুণারত্নের ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। এরপরের কিছুটা সময় ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ হতাশার। শুরুতে মুশফিকুর রহিম ও পরে শামীম পাটোয়ারী দুটি ক্যাচ ছাড়েন। মেন্ডিসের ক্যাচ ছেড়ে শামীম দেন ছক্কা।
পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৫১ রান খরচ করে ১ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সাকিব আল হাসান এর মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলেন পাঁচ বোলার। অল্প সময় পরপর বোলিং বদলাচ্ছিলেন তিনি, সেটি অবশ্য কাজেও এসেছে। যদিও উইকেট না পাওয়ার হতাশা কাটছিল না। গত কয়েক ম্যাচে শরিফুল ইসলাম নতুন বলে ভালো করছিলেন, এদিন তেমন সুযোগ পাননি।
তবে তিনিই বাংলাদেশকে এনে দেন দ্বিতীয় উইকেট। ৬০ বলে ৪০ রান করা পাথুম নিশাঙ্কাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই ব্যাটার। এরপর আরেক সেট ব্যাটার কুশল মেন্ডিসকেও সাজঘরে ফেরান শরিফুল। তার বাউন্সার থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের হাতে ক্যাচ দেন ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩ বলে ৫০ রান করা মেন্ডিস। দ্রুত দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন শরিফুল।
এরপর বাংলাদেশের বোলাররা রীতিমতো চেপে ধরেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের। নাসুম ওভারপ্রতি রান দিচ্ছিলেন তিনের নিচে, সাকিবও তাই। আরেকদিকে উইকেট এনে দেন পেসাররা। তাসকিন আহমেদ ২৩ বলে ১০ রান করা চারিথ আশালাঙ্কাকে আউট করেন। ১৬ বলে ৬ রান করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা হাসান মাহমুদের বলে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিমের হাতে।
ততক্ষণে ক্রিজে চলে এসেছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তিনি স্পিন খেলছিলেন খুব ভালো, ইনিংস এগিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। তার সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ৪০তম ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। তারা ছিল বেশ চাপেও। এরপর ধীরে ধীরে দলকে তুলে আনার চেষ্টা করেন সামারাবিক্রমা ও শানাকা।
পরের ৫ ওভারে ৪৩ রান তুলে শ্রীলঙ্কা রানটাকে বেশ ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার আভাস দেয়। কিন্তু এরপর আবারও বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান বোলাররা। সাকিব ৪৪তম ওভারে ৪ রান দেওয়ার পর ৪৬তম ওভারে এসে ৫ রান দেন। এর ঠিক পরের ওভারেই দুর্দান্ত বোলিং করেন হাসান মাহমুদ, দেন কেবল ৩ রান। ওই ওভারেই দাসুন শানাকাকে বোল্ডও করেন হাসান।
তবুও হাল ছাড়েননি সামারাবিক্রমা। সাকিবের করা ৪৮তম ওভারে ১১ রান নেওয়ার পরেরটিতে হাসান মাহমুদকে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান। তাসকিন আহমেদের শেষ ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ওই ওভারেও একটি চার ও ছক্কা হাঁকান। ৮ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৭২ বল খেলে ৯৩ রান করেন সামারাবিক্রমা।
বাংলাদেশের তিন পেসারের মধ্যে তাসকিন ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে তিন, শরিফুল ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে দুই ও হাসান মাহমুদ ৯ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন। ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে সাকিব ও ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নাসুম উইকেটশূন্য ছিলেন। ৩ ওভারে ১৪ রান দেওয়া মিরাজও উইকেট পাননি।