জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি শোধন করে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলা শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবারে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধিতার মধ্যেই নেওয়া হচ্ছে এ পদক্ষেপ। জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ পরিকল্পনাটি অনুমোদন করার কয়েক সপ্তাহ পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালের সুনামিতে ফুকুশিমা কেন্দ্রটি ধ্বংস হওয়ার পর ১৩ লাখ ৪০ হাজার টন তেজস্ক্রিয় পানি সঞ্চিত রাখা হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার এক বৈঠকের পর বলেছেন, আবহাওয়া ও সাগরের পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে আগামী ২৪ অগাস্ট থেকে পানি ছাড়তে শুরু করার অনুরোধ জানাবে কর্তৃপক্ষ।
কিশিদা রোববার ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করতে যান। এতে তেজস্ক্রিয় পানি খুব শিগগিরই সাগরে ছাড়া হতে পারে বলে জল্পনা সৃষ্টি হয়।
কেন্দ্রের দূষিত পানি সরিয়ে ফেলার জন্য এ পানি সাগরে ফেলাটা প্রয়োজন বলেই জানিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাজধানী টোকিও ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
জাপান এই দূষিত পানি এক দশকের বেশি সময় ধরে সংগ্রহ করছে এবং মজুদ করে রেখে আসছে। কিনতু এখন মজুদের জায়গা সীমিত হয়ে আসছে।
২০১১ সালের ১১ মার্চ ভয়াবহ এক ভূমিকম্প এবং এ থেকে সৃষ্ট সুনামির বিশাল জলোচ্ছ্বাসে জাপানের ফুকুশিমায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারটি পারমাণবিক চুল্লি প্লাবিত হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ফুকুশিমার ওই বিপর্যয়কে তুলনা করা হয় ইউক্রেইনের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার সঙ্গে। দুটি বিপর্যয়েই প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জীবন বিপন্ন হওয়ায় আশেপাশের এলাকা থেকে লাখো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার বিষয়টি প্রথম ২০২১ সালের অনুমোদন করে জাপান সরকার। সেসময় জাপান সরকার বলেছিল, তেজস্ক্রিয় ১০ লাখ টন পানি শোধন করে পর্যায়ক্রমে সাগরে ফেলা হবে।
কিন্তু জাপানের এই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। দুই বছর আগে জাপান এই পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকেই সেদেশের জেলে এবং সামুদ্রিক খাবার ব্যবসায় নিয়োজিতরা-সহ ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে মানুষ জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল। তাদের আশঙ্কা, তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেললে অনেকে সামুদ্রিক খাবার কেনা বন্ধ করে দেবে।
জাপানের প্রতিবেশীরাও খুশি নয়। সবচেয়ে বেশি সোচ্চার চীন। তারা জাপানের বিরুদ্ধে মহাসাগরকে তাদের ‘ব্যক্তিগত নর্দমা’ হিসাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেছে।
তবে আইএইএ বলছে, জাপান ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মানদণ্ড অনুযায়ীই করা হয়েছে। এতে মানুষ ও পরিবেশের ওপর তেমন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না।
জাপান সরকার এবং ফুকুশিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানি টেপকোও গবেষণা চালিয়ে এটা দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, সাগরে ফেলা শোধন করা তেজস্ক্রিয় পানি মানুষ এবং সাগরের জীব-বৈচিত্র্যের জন্য তেমন ঝুঁকির কারণ হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রিটিয়াম পানি থেকে আলাদা করা খুব কঠিন এবং এর মাত্রা বেশি থাকলেই কেবল তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।ফলে সাগরে পানি ছাড়ার আগে এই ট্রিটিয়ামকে পাতলা করে বিপজ্জনক মাত্রার নিচে নামাতে হবে।
কিন্তু টেপকোর তেজস্ক্রিয় পানিশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে পরিবেশবাদী গোষ্ঠী গ্রিনপিসের কর্মীরা। তারা বলছে, পানি থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ কমাতে এই প্রক্রিয়া খুব বেশি কার্যকর নয়। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরাও তাই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন।
সমালোচকরা বলছেন, জাপানের বরং এখন এই শোধন করা তেজস্ক্রিয় পানি ট্যাংকেই রেখে দেওয়া উচিত। এতে করে পানি শোধন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার সময় পাওয়া যাবে এবং পানিতে যতটুকু তেজস্ক্রিয়তা আছে তা প্রাকৃতিকভাবেই কমে আসতে পারে।
কী ঝুঁকি রয়েছে
তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পানিতে কিছু বিপজ্জনক উপকরণ আছে, তবে টেপকো জানিয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই পরিশোধন করা সম্ভব।
কাছাকাছি অবস্থিত নামি সমুদ্রতট থেকে ফুকুশিমা দাই চি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র দেখা যাচ্ছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ট্রিটিয়াম, যেটি সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে এ ধরনের কোনো প্রযুক্তি নেই।
তবে জাপান সরকার ও আইএইএ জানিয়েছে, তেজস্ক্রিয় পানি খুব ধীরে ধীরে, কয়েক দশক ধরে সাগরে ছাড়া হবে।
এর অর্থ, পানিতে খুব স্বল্প পরিমাণ ট্রিটিয়াম মেশানো হবে।
টেপকো ও আইএইএ যুক্তি দিয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই পরিবেশ থেকে ট্রিটিয়াম পানির সঙ্গে মিশে যায়, এমন কী, মানবদেহেও এটি প্রবেশ করে। বৃষ্টির পানি থেকে সমুদ্রের পানি ও কলের পানির মাধ্যমে এটি ঘটে। তাদের যুক্তি, স্বল্প পরিমাণে সাগরে মেশানো হলেও এতে বড় কোনো ঝুঁকি নেই।
আইএইএর প্রতিবেদনে গ্রসি জানান, পরিশোধিত পানি সাগরে ফেললে তা মানুষ ও পরিবেশের ওপর ন্যুনতম প্রভাব ফেলবে।
অন্যদেশগুলো কী বলছে
জাতিসংঘ অনুমোদন দিলেও আশ্বস্ত হয়নি প্রতিবেশী দেশগুলো এবং স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়, যারা ২০১১ সালের পারমাণবিক বিপর্যয়ের প্রভাব এখনো অনুভব করেন।
কেউ কেউ আইএইএর পর্যালোচনার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেছে। চীন সম্প্রতি জানায়, আইএইএর নিরীক্ষা ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিকে আইনি বৈধতা দেয় না।
যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে সমর্থন জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাপান তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বচ্ছতা দেখিয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পারমাণবিক নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনেই এই উদ্যোগ নিয়েছে।
তাইওয়ানও জানিয়েছে, যে পরিমাণ ট্রিটিয়াম পানিতে ছাড়া হবে, তা খুবই সামান্য এবং এতে তাইওয়ানের ওপর ন্যুনতম প্রভাব পড়বে। স্বশাসিত দ্বীপটি জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।
তবে জাপানের নিকট প্রতিবেশী এতটা ইতিবাচক নয়।
মার্চে চীনের এক কর্মকর্তা সতর্ক করেন, বর্জ্য পানি ‘সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নজিরবিহীন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগর জাপানের পয়ঃনিষ্কাষণের জায়গা নয় যে তারা চাইলেই সেখানে তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়তে পারবে।’
প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর সংগঠন, প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরামের মহাসচিব জানুয়ারিতে এ বিষয়টি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু জুনে এ পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান। তিনি জানান, পরিশোধনের পর এমন কী এই পানি পানও করা সম্ভব।
অন্যান্য দেশও কি তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়ে?
আইএইএসহ অনেক সংস্থা উল্লেখ করেছে যে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো নিয়মিত এবং নিরাপদে কম মাত্রার ট্রিটিয়ামযুক্ত পানি বর্জ্য হিসেবে ছেড়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশনের এক মুখপাত্র সিএনএনকে নিশ্চিত করেছেন, ‘বিভিন্ন জলপথের আশেপাশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই স্বল্পমাত্রার তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত পানিই ছেড়ে থাকে।
জনমত কী বলছে
সমুদ্রে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে, এ আশঙ্কায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সামুদ্রিক মাছ ও লবণের দাম বেড়ে গেছে। অনেকেই এ ধরনের উপকরণ বেশি করে কিনে রাখছেন।
মার্চে জাপানে এক মতামত জরিপে জানা যায়, ১ হাজার ৩০৪ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৫১ জন এই উদ্যোগকে সমর্থন করেন। ৪১ জন এর বিরোধিতা করেন। এ বছরের শুরুতে টোকিওর জনগণ রাস্তায় নেমে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তেজস্ক্রিয় এই পানি ছেড়ে দিলে ফুকুশিমার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর থেকে ফুকুশিমার জেলেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সর্বশেষ এই উদ্যোগে তাদের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলে ভাবছেন তাদের অনেকে।
Japan’s Fukushima nuclear plant to release radioactive wastewater into sea
The operator of the tsunami-wrecked Fukushima Daiichi nuclear power plant will begin releasing the first batch of treated and diluted radioactive wastewater into the Pacific Ocean later Thursday, utility executives said.
Tokyo Electric Power Company Holdings executive Junichi Matsumoto, who is in charge of the project, said its final preparations and testing have cleared safety standards and the release will begin in the early afternoon.
The release will begin more than 12 years after the meltdowns of three reactors at the plant that was heavily damaged by the massive earthquake and tsunami that struck Japan‘s northeastern coast on March 11, 2011.
Radioactive water — both seeping groundwater and water used to cool the reactors — have accumulated at the site ever since, and TEPCO and the government say the mass quantities of the water have hampered the daunting task of removing the deadly toxic melted debris from the reactors.
“The release of the … treated water is a significant milestone as part of the huge task of decommissioning,” Matsumoto said, noting the tremendous risks involving the challenges that still would take decades.
The final step before the release began Tuesday when just 1 ton of treated water was sent from one of the site’s many storage tanks to be diluted with 1,200 tons of seawater, and the mixture was kept in the primary pool for two days for final sampling, Matsumoto said. The tritium levels from those samples were significantly safer than the legally releasable levels, Matsumoto said.
He added the mild sea conditions off the plant allows seawater sampling by boat hours after the release, and North Korea’s failed rocket launch early Thursday morning did not affect Fukushima.
The water treatment process can reduce the amounts of more than 60 other radionuclides to government-set releasable levels, except for tritium, which the government and TEPCO say is safe for humans if consumed in small amounts.
A batch of 460 tons of water will be sent to the mixing for the actual discharge over the next 24 hours. Thursday’s release was to begin with the least radioactive water to ensure safety, Matsumoto said. For the first round of the release, 7,800 tons of treated water will be released from a set of 10 tanks over the next 17 days, Matsumoto said.
Japan’s government announced the release of the water into the sea in 2021, and it has faced strong protests, especially from Japanese fisheries groups, while groups in South Korea and China also raised concern, making it a political and diplomatic issue.
Conservation groups and other activists were among those protesting outside of TEPCO’s headquarters in Tokyo and a number of locations in Fukushima as the announcement of the final preparations being complete was made.
The water that has accumulated at the plant since the 2011 disaster is partly recycled to keep the damaged reactors cool, since the tsunami destroyed the plant‘s cooling systems. But the rest of the water is stored in about 1,000 large tanks, which are already filled to 98% of their 1.37-million ton capacity.
Those tanks cover much of the plant complex, which needs the space to build new facilities that will be needed to continue the decommissioning of the plant, officials said. They have also said the release is necessary to prevent accidental leaks of the untreated, undiluted water, which exceeds the government’s safety limits.
TEPCO plans to release 31,200 tons of the treated water by the end of March 2024, which would empty only 10 tanks because the contaminated continues to accumulate, though the pace of the release will later pick up. The plan is not to dump large amounts at once, and the entire process will take about 30 years to finish, Matsumoto said.
Japanese fisheries groups worry the release will cause further damage to the reputation of their seafood. Fukushima prefecture’s current catch is only about one-fifth its pre-disaster level due to a decline in the fishing population and smaller catch sizes.
In addition, China has tightened radiation testing on Japanese products from Fukushima and nine other prefectures, halting exports at customs for weeks, Fisheries Agency officials said.
Matsumoto pledged to work with the government to do utmost to limit such damage. “In particular, it is important that we ourselves ensure safety and quality towards the release into the ocean,” Matsumoto said. “The other is to ensure prompt and accurate information based on science.”
(AP)