ছোটবেলা থেকে অভাবে বড় হয়েছে,সে এখন স্ট্যাটাস দেয়,পত্রিকা নিয়ে টয়লেট করার অভ্যাস

আমার বন্ধু রফিক (ছদ্মনাম) । খুব চালাক, খুব চতুর। ছোটবেলায় দেখেছি- খুব অভাব অনটনে বড় হয়েছে। আমি নিজে বহুবার আমার ভাগের খাবার তাকে দিয়েছি। ঈদে জামা কিনে দিয়েছি। ইদানিং সে দালালি করে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। সেদিন সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস এ লিখেছে- ছোটবেলা থেকেই আমার পত্রিকা নিয়ে টয়লেট করার অভ্যাস। পত্রিকা হাতে টয়লেটে না গেলে আমার … হয় না।

আমি তার স্ট্যাটাস দেখে প্রচন্ড অবাক! ছোটবেলা থেকে সে অভাবে অভাবে বড় হয়েছে। এই কয়েক বছর ধরে টাকা হয়েছে। আজিব !! রফিকের আরেকটা ঘটনা বলি- ছোটবেলা দেখতাম সে সেলুনে গিয়ে আমাদের সাথে চুল কাটাতে যেত না। সে যেত রাস্তার ধারের ছালা দিয়ে ঘেরা দোকানে। সেখানে চুল কাটতে ৫ টাকা নেয়। কে কোথায় চুল কাটাবে সে কোনো ঘটনা না। সম্পূর্ণই তার ইচ্ছা। কিন্তু এই ছেলে যখন বলে- এসি সেলুন ছাড়া আমি চুল কাটাই না। চুল কাটাতে গেলে আমার বিল হয় ৩০০০ টাকা। আমি মনে মনে ভাবি সারা জীবন রাস্তার ধারে চুল কাটাতি- এখন এসি সেলুন ছাড়া সে চুল কাটায় না। আমার কথা হলো মানুষ কেন অতীত ভুলে যাবে? এসি সেলুনে গিয়ে সে আবার একটা ছবি ফেসবুকে দেয়।

আমার বন্ধু বাবু (ছদ্মনাম) । ছোটবেলা থেকেই বিরাট বদ। ক্লাশ টেন থেকেই হোটেল যায়। হোটেল মানে ভাত খাওয়ার হোটেল না। আবাসিক হোটেল। এমনও দেখেছি- পরীক্ষার ফিস এর টাকা দিয়ে সে মহাখালি আবাসিক হোটেলে যৌনতা উপভোগ করতে গিয়েছে। শেষে আমরা কয়েক বন্ধু মিলে তার ফিসের টাকা দিয়ে দিতাম। এরকম বহুবার হয়েছে। ঢাকা শহরে কোন কোন হোটেলে পতিতা থাকে তার রেট কত- সেসব তার মুখস্ত। এবং অসংখ্য দালালের সাথে তার বেশ সু সম্পর্ক। রাস্তা ঘাটে কোনো মেয়ে দেখলে নানান কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করতো। যাই হোক তার নোংরা স্বভাবের কারনে- আমরা সব বন্ধুরা বাবু’র কাছ থেকে দূরে থাকতাম। ইদানিং সে প্রায়ই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়- কোরআন হাদিস নিয়ে। কিভাবে সঠিক ভাবে নামাজ পড়তে হবে, তার স্ট্যাটাস মানেই ধর্মীয় গুনগান গাওয়া। গত বছরও দেখেছি- এক মেয়ের সাথে প্রেমের অভিনয় করে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। সেগুলো আবার ভিডিও করে রেখেছে। যখন সে ফেসবুকে ধর্মীয় ব্যাপার স্যাপার নিয়ে চ্যাটাং চ্যাটাং করে- আমি তার অতীত দিনের কথা গুলো বলে দেই। আসল মুখোশ সবাইকে দেখিয়ে দেই।

আরেক পরিচিত’ একজনের কথা বলি, তার নাম জনি। লেখাপড়া বিশেষ কিছু করেনি। বাংলাটা মোটামোটি পড়তে পারে। ক্লাশ ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়েছে। সে একজন রাজনীতিবিদ এর মাধ্যমে একটা সরকারি চাকরি পেয়ে যায় রাজউক এ। সে এখন ফেসবুকে নামী দামী লোকদের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করে। সাথে লিখে দেয়- অমুক ভাইয়ের সাথে চায়ের আড্ডায়। অনেকদিন পর অমুক ভাইয়ের সাথে দেখা। অনেক গল্প হলো। ইত্যাদি ইত্যাদি। তার পোষ্ট করা ছবিতে দেখা যায়। অনেক লোকের ভিড়ে সে কোনো রকমে মাথাটা বের করে রেখেছে। সেটাই ছবিতে দেখা যাচ্ছে। বা যে সেলিব্রেটির সাথে ছবি তুলেছে, সেই সেলিব্রেটি জানে না। হয়তো সামনে গিয়ে একটা সেলফি নিয়েছে। যাই হোক সেই ছবিতে হাজার হাজার লাইক। এইসব কোনো ভদ্রলোক এইরকম ছবিতে লাইক দেয় না। দিন দিন অসুস্থ মানসিকতার লোকজন দিয়ে দেশ ভরে যাচ্ছে। খুব চিন্তার বিষয়।

এবার কয়েকজন সাহিত্যিকের কথা বলি। তাদের একটা দল আছে। এই দলে বেশ কয়েকজন ‘কথিত’ কবি আছেন এবং বেশ কয়েকজন ‘কথিত’ কথাসাহিত্যিক আছেন। তারা সাহিত্যকে সিন্ডিকেট করে ফেলেছে। এইসব সিন্ডিক্যাটওয়ালারা বেশ কিছু বই বের করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের বই ২০ কপিও বিক্রি হয়নি। তারা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করে। সাহিত্য কি বা কেমন সেসব নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। তাদের সস্তা স্ট্যাটাস পড়ে আমি অবাক! তারা তো সাহিত্যের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে !!! ধরুন এই দলের কারো লেখা নিয়ে আপনি নেগেটিব মন্তব্য করলেন, তখন ঐ দলের সবাই আপনাকে ঘিরে ধরবে। আপনাকে অপমান করবে। এতটাই তাদের ঐক্য। মুলত এরা সাহিত্যের কিছুই বুঝে না। তাদের তেমন লেখাপড়াও নেই। কিন্তু একজন আরেকজনকে নিয়ে খুব উচ্চাসিত। একজন আরেকজনকে দিনের মধ্যে ৫০০ বার কথাসাহিত্যিক বলে ডাকেন। কথাসাহ্যতিক আবার তাকে ‘কবি’ ‘কবি’ বলে ডাকেন। আমার মনের হয় এই শ্রেনীর লোকজন বাংলা সাহিত্যকে ডুবাবে।

আমাদের এলাকায় একটা কথা আছে- ”ছোট লোকের পোলায় যদি জমিদারি পায়, কানের আগায় কলম গুঁজে বাঈজি নাচায়”। আশে পাশের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে আমার গ্রামের এই কথাটি খুব মনে পড়ে। এই জন্যই কবি বলেছেন- ‘আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।’