কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গত দুই-তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ সহ বহু বাড়ীঘর প্লাবিত হয়েছে। এতে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পর্যাপ্ত ডেনেজ ব্যবস্থাপনার অভাব, সরকারি খাল দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে যত্রতত্র মাটি ভরাট করে অপরিকল্পিত নতুন নতুন বাড়ীঘর নির্মাণকেই এ জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা সহ স্থানীয় সচেতন মহল।
সোমবার ও মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টির ফলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদ এলাকার সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা, চৌদ্দগ্রাম নজমিয়া কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণ, চৌদ্দগ্রাম পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সহ সংলগ্ন সড়ক, গোমারবাড়ী বায়তুল মা’মুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ, পৌর এলাকার গোমারবাড়ী পূর্বপাড়ার পালোয়ান বাড়ী সংলগ্ন সড়ক ও কয়েকটি বসতবাড়ী, লক্ষ্মীপুর গ্রামের নজমিয়া কামিল মাদরাসা রোডের দক্ষিণ পাশের নিচু এলাকার কয়েকটি বসতবাড়ী সহ উপজেলার তেরটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন খাল, জলাশয় ও পুকুর ডুবে কৃষি বীজতলা ও ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, মসজিদ-মাদরাসা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আঙ্গিনা প্লাবিত হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে রাস্তাঘাট ডুবে ও নির্মাণাধিন রাস্তাঘাটে ভাঙ্গণের ফলে পানি উঠে জলাবদ্ধতা তৈরী হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থী সহ পথচারীদের যাতায়াতে ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত রোববার ভোর থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে টানা বৃষ্টির ফলে পানিতে ডুবে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে সরকারি বেশ কয়েকটি অফিসের আসবাবপত্র ও মূল্যবান কাগজপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সেবাগ্রহীতা সাধারণ রোগিরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। নজমিয়া কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণ প্লাবিত হওয়ায় চলমান আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদেরকে মঙ্গলবার সকালে হাঁটু পানি ডিঙিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে। পানি নিস্কাশন অব্যবস্থাপনার ফলে পৌর এলাকার গোমারবাড়ীর হাউজ বিল্ডিং রোডের বায়তুল মা’মুর জামে মসজিদের সামনের ঈদগাঁহ মাঠ সহ মসজিদের নীচতলার একটা অংশ পানিতে ডুবে গেছে। একই এলাকার পূর্বপাড়ায় পালোয়ান বাড়ীর সামনের রাস্তা সহ কয়েকটি বাড়ীতে পানি উঠেছে। পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফসলী জমিতে অপরিকল্পিতভাবে মাটি ভরাট করে জলাবদ্ধতা তৈরীর ফলে আশেপাশের কৃষি জমি পানিতে ডুবে জলাবদ্ধতা তৈরীর ফলে পাশ্ববর্তী একটি বাড়ীর পাঁচটি পরিবার তিনদিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল, জলাশয়, পুকুর ও ড্রেনের পানি বসততবাড়ীতে উঠে যাতায়াতে বিঘœতা সৃষ্টি, রান্নাঘর প্লাবিত হয়ে রান্নার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি সহ জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। পানি নিস্কাশনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় আরো কয়েকদিন বৃষ্টি হলে এসব এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে।
চিওড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মো: ইউছুফ মজুমদার বলেন, ‘রোববার থেকে টানা ভারি বর্ষণের ফলে বীজতলাসহ ফসলি জমি ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: সাহিদুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে জলাবদ্ধতা ও খাল খননের বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছিলো। দীর্ঘদিন বিভিন্ন খাল খনন না করায় প্রবল বৃষ্টির কারণে উপজেলা চত্ত্বরে সমাজসেবা অফিসে পানি ঢুকে মূল্যবান কাগজপত্র ভিজে যাওয়া সহ আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।’
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘সরেজমিনে উপজেলা কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতা দেখেছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত পানি নিস্কাশন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’